প্রশ্ন - ১০। (ক) সামগ্রিক চাহিদা ও সামগ্রিক যােগান ধারণা ব্যাখ্যা কর। (Explain the concepts of aggregate demand/ AD and aggregate supply/ AS.)
-প্রফেসর মনতোষ চক্রবর্তী
Email: manotosh.chakravarty@gmail.com
সামগ্রিক চাহিদা:
সামগ্রিক চাহিদা বলতে সার্বিক(জেনারেল) বা গড় দামস্তর প্রেক্ষিতে সমাজের মোট ব্যয়ের পরিমাণকে বুঝানাে হয়। এভাবেও বলা চলে- সাধারণ দামস্তরের নির্দিষ্ট অবস্থায় পরিবার, ফার্ম, সরকার এবং বিদেশী ক্রেতারা সম্মিলিতভাবে দ্রব্য ও সেবা যে পরিমাণ ক্রয় করতে প্রস্তুত, তাই হলো সামগ্রিক চাহিদা । যে রেখার দ্বারা গড় দামস্তর প্রেক্ষিতে সমাজের সামগ্রিক চাহিদা বা সামগ্রিক ব্যয় নির্দেশ করা হয় , তাকে সামগ্রিক চাহিদা রেখা বলে। চিত্রে AD রেখার বিভিন্ন বিন্দুতে গড় দামস্তরের (P) বিভিন্ন অবস্থায় সমাজের মােট দ্রব্য ও সেবা ক্রয়(চাহিদার পরিমাণ) নির্দেশ করা হয়।
[নির্দিষ্ট সময়কালে সমাজের উৎপাদিত মােট দ্রব্য ও সেবার পরিমাণ অথবা সমাজের মোট চাহিদার (ব্যয়ের) পরিমাণ দ্বারা প্রকৃত GDP বিবেচিত হয়। সুতরাং দেশের গড় দামস্তর এবং দ্রব্য ও সেবার মােট চাহিদা (বা প্রকৃত GDP) এর সম্পর্ক নির্দেশক রেখাকে সামগ্রিক চাহিদা রেখা বলে । দামস্তরের সঙ্গে মােট দ্রব্য ও সেবার মােট চাহিদা বিপরীত মুখী হওয়ায় সামগ্রিক চাহিদা রেখা নিম্নগামী হয়। কারণ সাধারণ দামস্তর হ্রাস পেলে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে এবং তার ফলে মোট চাহিদা বাড়ে , সেই সাথে দেশের মোট উৎপাদন বা আয়ও বাড়ে।]
সামগ্রিক যােগান :
নির্দিষ্ট দামস্তরে একটি দেশের সমস্ত ফার্ম কতটা পরিমাণ মােট উৎপাদন করে বা যােগান দিতে প্রস্তুত থাকে, তাকে সামগ্রিক যােগান বলে । কাজেই দেশের উৎপাদক বা যোগানদারদের দৃষ্টিকোণ থেকে দামস্তর প্রেক্ষিতে প্রকৃত GDP নির্দেশনাই হলো সামগ্রিক যােগান। সাধারণতঃ সার্বিক (গড়) দামস্তর ও সামগ্রিক যােগানের পরিমাণ এর মধ্যে একমুখী সম্পর্ক থাকায় সামগ্রিক যােগান রেখা উর্দ্ধগামী হয়। চিত্রে তা দেখানো হলো।
[দ্রষ্টব্য: যারা আরো জানতে/ লিখতে চায় -তাদের জন্য নিচের আলোচনাটি প্রযোজ্য -
অর্থনীতিবিদরা সামগ্রিক যােগানকে স্বল্পকালীন ও দীর্ঘকালীন যােগান হিসাবে পৃথক করেন।
স্বল্পকালীন সামগ্রিক যােগান :
অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত থেকে সাধারণ দামস্তর বাড়লে সামগ্রিক যােগানের পরিমাণ যখন বাড়ে, তখন তা স্বল্পকালীন সামগ্রিক যােগান প্রকৃতি (যা আপেক্ষিকভাবে স্থিতিস্থাপক) হিসাবে গণ্য হবে । স্বল্পকালীন সামগ্রিক যােগান রেখা বাম থেকে ডানদিকে উর্দ্ধগামী হয়। উপরের চিত্রে তা দেখানাে হয়েছে । স্বল্পকালীন সামগ্রিক যােগান রেখা ঊর্ধ্বগামী -তবে নির্দিষ্ট সম্পদ এবং প্রযুক্তি প্রেক্ষিতে দেশে সম্ভাবনাময় উৎপাদন (potential output) এর লক্ষ্য অর্জিত হয়ে গেলে (নিচের চিত্রে Yp ) দ্রব্য ও সেবা যােগানের পরিমাণ আর বাড়ানাে যায় না। তখন সামগ্রিক যােগান রেখার উল্লম্ব অংশ দেখা দেয়। ঊর্ধ্বগামী ও উল্লম্ব অংশ সমন্বিত সামগ্রিক যােগান রেখা (AS) নিচের চিত্রে দেখানো হয়েছে।
দীর্ঘকালীন সামগ্রিক যােগান :
স্বল্পকালের সমন্বয়েই পাওয়া যায় দীর্ঘকাল। স্বল্পকালীন AS রেখা, সম্ভাবনাময় উৎপাদন (potential output) এর সীমানা অতিক্রম করতে পারে না। এভাবে একাধিক স্বল্পকালীন সামগ্রিক যােগান (SRAS) রেখার potential output নির্দেশক বিন্দুগুলোকে একটি রেখার দ্বারা সংযুক্ত করলে যে উল্লম্ব রেখাটি পাওয়া যায় , তা হলো দীর্ঘকালীন সামগ্রিক যােগান রেখা। চিত্রে তা দেখানো হয়েছে। কাজেই নির্দিষ্ট সম্পদ এবং প্রযুক্তি প্রেক্ষিতে দীর্ঘকালে দেশে সম্ভাবনাময় উৎপাদন(potential output) এর লক্ষ্য পুরাপুরি অর্জিত হলে দ্রব্য ও সেবা যােগানের পরিমাণ আর বাড়ানাে যায় না। এই অবস্থায় গড় দামস্তর প্রেক্ষিত দেশের উৎপাদন ও সামগ্রিক যোগান পূর্ণ অস্থিতিস্থাপক হয়। ফলে দীর্ঘকালীন সামগ্রিক যােগান রেখা(LRAS) উল্লম্ব হয়। চিত্রে লক্ষ্য করা যায়, দামস্তর যাই হােক না কেন, উৎপাদনের পরিমাণ Yp তে স্থির থাকে।
তিনটি পর্যায়ের সমন্বয়ে প্রাপ্ত দীর্ঘকালীন সামগ্রিক যােগান রেখা:
বিভিন্ন স্বল্পকালীন AS -কে এক একটি পর্যায় হিসাবে বিবেচনা করে তাদের সমন্বয়েও দীর্ঘকালীন সামগ্রিক যােগান রেখা পাওয়া যায়। এরূপ সমন্বিত সামগ্রিক যােগান রেখাতে ৩টি পর্যায় পরিলক্ষিত হয়- ১ম কেইনসীয় পর্যায় (মন্দা পর্যায়), ২য়: মধ্যবর্তী/অন্তর্বর্তী পর্যায় (অর্থনীতির প্রসারমান পর্যায়) এবং ৩য়: ক্লাসিক্যাল (পূর্ণ নিয়ােগ) পর্যায় বা নয়া ক্লাসিক্যাল পর্যায়। চিত্রে পর্যায়ভিত্তিক সামগ্রিক যােগান রেখা পৃথক পৃথকভাবে দেখানাের পর শেষে সমন্বিত দীর্ঘকালীন যােগান রেখা নিম্নে দেখানাে হয়েছে।
(১) কেইনসীয় সামগ্রিক যােগান রেখা (সামগ্রিক যােগানের কেইনসীয় পর্যায়): কেইনসের তত্ত্ব অনুসারে সামগ্রিক যােগান রেখা আনুভূমিক (সম্পূর্ণ স্থিতিস্থাপক) হয়। কারণ দেশে অধিক বেকারত্ব থাকলে উৎপাদন ব্যয় না বাড়িয়ে উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ানাে সম্ভব। এর দ্বারা বুঝানাে হয় যে, চলতি দামে যে পরিমাণ দ্রব্যের চাহিদা থাকে, সেই পরিমাণ দ্রব্য, ফার্ম যােগান দিতে প্রস্তুত থাকে।
(২) সামগ্রিক যােগানের অন্তর্বর্তী / মধ্যবর্তী পর্যায়: প্রাথমিক স্তরের পর অধিক উৎপাদন স্তরে সামগ্রিক যােগান রেখা উপর দিকে যেতে শুরু করে। তখন উৎপাদনের ব্যয় বাড়ে, কারণ শ্রম, কাঁচামাল ও মূলধন সামগ্রি যতই স্বল্প (scarce) হয়ে আসবে, ততই ফার্মগুলাে নিজেদের মধ্যে প্রতিযােগিতার কারণে উপাদান দাম (ব্যয়) বাড়িয়ে তুলবে। ফলে সামগ্রিক যােগান রেখা তখন ঊর্ধ্বগামী হয়।
(৩) ক্লাসিক্যাল তথা নয়া ক্লাসিক্যাল সামগ্রিক যােগান রেখা : নয়া ক্লাসিক্যাল চিন্তাধারা অনুসারে দীর্ঘকালীন সামগ্রিক যােগান রেখা উল্লম্ব হয়। নির্দিষ্ট সম্পদ এবং প্রদত্ত প্রযুক্তির প্রেক্ষিতে সেই সম্ভাবনাময় উৎপাদন পুরাপুরি অর্জিত হলে দ্রব্য ও সেবা যােগানের পরিমাণ বাড়ানাে যায় না। এই অবস্থায় দীর্ঘকালীন সামগ্রিক যােগান রেখা উল্লম্ব হয়। চিত্রে লক্ষ্য করা যায়, দামস্তর যাই হােক -কেন উৎপাদনের পরিমাণ Yp তে স্থির থাকে। সুতরাং চূড়ান্ত পর্যায়ে পূর্ণ নিয়ােগস্তরে দীর্ঘকালীন সামগ্রিক যােগান রেখা উল্লম্ব হয়। এর দ্বারা সর্বোচ্চ সম্ভাবনাময় উৎপাদন (তথা পূর্ণ নিয়ােগ) সেখানে নির্দেশিত হয়।
উপরের তিনটি পর্যায়কে সমন্বিত করে দীর্ঘকালীন সামগ্রিক যােগান রেখা। পাওয়া যায়। চিত্রে নির্দেশিত(সমন্বিত রেখা) AS হলাে দীর্ঘকালীন সামগ্রিক যােগান রেখা।
ধন্যবাদ।
-প্রফেসর মনতোষ চক্রবর্তী
Email: manotosh.chakravarty@gmail.com
Comments