top of page
Search
  • Writer's pictureProf Manotosh Chakravarty

Basic Microeconomics - Lesson - 1.5

মৌলিক ব্যষ্টিক অর্থনীতি- পাঠ:

(Basic Microeconomics - Lesson) : 1.5 অর্থনীতির জনক(Father of Economics) হিসাবে

অ্যাডাম স্মিথ এর পরিচিতি


- প্রফেসর মনতোষ চক্রবর্তী






এ পাঠ থেকে যা যা জানা যাবে:

(১) অ্যাডাম স্মিথ কোন দেশীয় অর্থনীতিবিদ ?

(২) অ্যাডাম স্মিথ কি শুধুই অর্থনীতির জনক ?

(৩) অ্যাডাম স্মিথের বিখ্যাত দুটি গ্রন্থ কি কি এবং কত সালে সেগুলো প্রকাশিত হয় ?

(৪) স্মিথ কোন বিষয়ে পড়াশোনা করেন এবং কোন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে?

(৫) ধ্রুপদী (ক্লাসিকাল) ‘মুক্ত বাজার ‘ অর্থনৈতিক তত্ত্বের ভিত্তি কে রচনা করেন এবং কোন গ্রন্থে ?

(৬) স্মিথের প্রিয় শিক্ষক হিসাবে কার নাম তিনি বিশেষ ভাবে স্বীকার করেন?

(৭) স্মিথের বন্ধু হিসাবে ভূমিকা পালনকারী একজন খ্যাতিমান দার্শনিকের নাম কি ?

(৮) স্মিথ শিশু বয়সে কাদের দ্বারা অপহৃত হয়েছিলেন?

(৯) বণিকবাদ ও ভূমিবাদ - এ দুটো চিন্তাধারার মধ্যে কোন ধারণাটির প্রতি স্মিথ বেশি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন?

অ্যাডাম স্মিথ (১৭২৩- ১৭৯০) হলেন স্কটিশ অর্থনীতিবিদ , দার্শনিক এবং লেখক, পাশাপাশি তিনি ছিলেন নৈতিক দার্শনিক, রাজনৈতিক অর্থনীতির পথিকৃৎ এবং “অর্থনীতির জনক''(Father of Economics) / '' পুঁজিবাদের জনক”(Father of Capitalism)/ “ক্ল্যাসিক্যাল অর্থনীতির জনক” (Father of classical economics)/ “বাজার অর্থনীতির জনক”(Father of market economy) নামেও তিনি পরিচিত।

অ্যাডাম স্মিথ রচিত দুটো বিখ্যাত গ্রন্থ :

স্মিথ বেশ কটি গ্রন্থ / নিবন্ধ রচনা করেছেন , তার মধ্যে দুটি তাত্ত্বিক গ্রন্থ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য :(১) Theory of Moral Sentiments (1759) এবং (২) An Inquiry into the Nature and Causes of the Wealth of Nations (1776), যা সংক্ষেপিত হয় ‘দ্য ওয়েলথ অফ নেশনস’ নামে।


স্মিথ সামাজিক দর্শন বিষয়ে পড়াশোনা করেন গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ও অক্সফোর্ডের বালিওল কলেজে। অক্সফোর্ডে জন স্নেল এর নামে প্রদত্ত বৃত্তি প্রাপক ছাত্রদের মধ্যে তিনি হলেন একজন। স্নাতক পাঠ শেষ করার পরে, ডেভিড হিউম এর সাথে একজোট হয়ে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি একটি সফল সিরিজ পাবলিক বক্তৃতা দিয়েছিলেন। স্মিথ গ্লাসগোতে অধ্যাপকত্ব গ্রহণ করেছিলেন, সেখানে নৈতিক দর্শন শেখাতেন। এ সময়ে ‘নৈতিক অনুভূতির থিওরি’ লিখেন এবং প্রকাশ করেন । জীবনের পরবর্তী পর্যায়ে এসে অধ্যাপকত্ব ছেড়ে দিয়ে তিনি একটি প্রাইভেট টিউটোরিং পদ গ্রহণ করেছিলেন, যার বদৌলতে ইউরোপ জুড়ে তিনি ভ্রমণ করতে পেরেছিলেন। সেখানে তাঁর সমসাময়িক অন্যান্য নেতৃস্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের সাথে সাক্ষাত হয়েছিল ।


স্মিথ ধ্রুপদী (ক্লাসিকাল) ‘মুক্ত বাজার ‘ অর্থনৈতিক তত্ত্বের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। ‘দ্য ওয়েলথ অফ নেশনস’ হলো অর্থনীতির আধুনিক শিক্ষা কার্যক্রমের ‘শৃঙ্খলার কান্ডারী’ । সেখানে এবং অন্যান্য রচনায় তিনি ‘শ্রম বিভাগ’ ধারণার বিকাশ সাধন করেন এবং যুক্তিযুক্ত স্বার্থ ও প্রতিযোগিতা কীভাবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিকে একটি জাতিকে নিয়ে যেতে পারে, তার ব্যাখ্যা দেন। স্মিথ তাঁর নিজের সময়েই বিতর্কিত ছিলেন । তাঁর সাধারণ পদ্ধতি ও লেখার স্টাইল নিয়ে অনেকেই তাঁকে ব্যঙ্গ করতেন।

অ্যাডাম স্মিথ এর জীবনের বিভিন্ন পর্যায় :


জীবনের প্রথম ভাগ- জন্ম ও শৈশব:

স্মিথের জন্ম হয় স্কটল্যান্ডের ফিফের কির্ককালডিতে । তাঁর পিতার নামও অ্যাডাম স্মিথ, যিনি বিচারক / অ্যাডভোকেট এর অধীনে একজন স্বাক্ষরকারী লেখক ( মহুরী) হিসাবে কাজ করতেন। স্মিথের মা হলেন মার্গারেট ডগলাস । স্মিথের জন্মের দুই মাস আগে তাঁর বাবা মারা যান ।


স্মিথের শৈশবকালীন একটি ঘটনা জানা গিয়েছিল, যা উল্লেখ করা প্রয়োজন। যখন তার বয়স চার বছর, তখন তার শহরের পথ দিয়ে একদল জিপসী যাচ্ছিল; যাওয়ার সময় তারা স্মিথকে চুরি করে নিয়ে যায়। স্মিথের কাকার চেষ্টায় জিপসীদের খোঁজ পাওয়া যায়। যখন তাদের ধরবার জন্য তাড়া করা হয়, তারা স্মিথকে রাস্তার ধারে ফেলে রেখেই পালিয়ে যায়। তাকে যদি পাওয়া না যেত, তিনি ঐ জিপসীদের মধ্যেই হয়তো জিপসী হয়ে থেকে যেতেন। ভাগ্যিস! স্মিথকে ফেরত পাওয়া গিয়েছিলো, না হলে কি হতো অর্থনীতির ? আমরা কি পেতাম ‘The Wealth of Nations ‘ ? যদি স্মিথকে ফেরত পাওয়া না যেত, তবে অর্থনীতির অদৃশ্য হাত ধারণাও পেতাম না, পেতাম না আমরা জানতে বাজার অর্থনীতির মূল ভিত্তি, পারতাম না আমরা বুঝতে পুঁজিবাদি আদর্শকে।


স্মিথের পাঠ সূচনা-গৃহ ও বিদ্যালয় :

স্মিথের পাঠ বিকাশে সবচে বেশি ভূমিকা রেখেছিলেন তাঁর মা। ছোটবেলায় স্মিথ তাঁর মায়ের খুব কাছাকাছি ছিলেন সবসময়, যাতে তিনি আবার হারিয়ে না যান। তাঁর মা পিতৃহারা সন্তানকে পণ্ডিত/ উচ্চ শিক্ষিত হিসাবে গড়ে তোলার জন্য উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করতেন এবং স্মিথকে সেইমতো উৎসাহিত করেছিলেন। স্কটল্যান্ডের অন্যতম সেরা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ‘কির্কাল্ডির বার্গ স্কুল’এ তিনি পড়াশুনা করেছিলেন - সেখানে তিনি শিখেছিলেন লাতিন, গণিত, ইতিহাস এবং সত্যিকার লেখাপড়া।


কলেজ / বিশ্ববিদ্যালয় এর আনুষ্ঠানিক শিক্ষা:

১৪ বছর বয়সে স্মিথ প্রবেশ করেছিলেন গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ফ্রান্সিস হ্যাচসনের অধীনে নৈতিক দর্শন অধ্যয়ন করেছিলেন। এখানে, স্মিথ তাঁর মানসিকতা / আবেগকে বিকশিত করেছিলেন স্বাধীনতা, যুক্তি এবং নিরপেক্ষ বক্তৃতার প্রতি। 1740 সালে, স্মিথ স্নাতকোত্তর পড়াশোনার জন্য উপস্থিত হন অক্সফোর্ডের অধীনে বালিয়ল কলেজে



স্মিথ গ্লাসগোতে তাঁর প্রিয় শিক্ষক ফ্রান্সিস হ্যাচসন এর কথা বারে বারে স্মরণ করেছেন, যিনি তাঁর সময়ে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম বিশিষ্ট প্রভাষক হিসাবে স্বীকৃত ছিলেন।




স্মিথের মতো হ্যাচসন কোনও সিস্টেম নির্মাতা ছিলেন না; বরং তাঁর চৌম্বকীয় ব্যক্তিত্ব এবং বক্তৃতা দেওয়ার পদ্ধতিটি তাঁর ছাত্রদের উপর এতটা প্রভাবিত করেছিল যে স্মিথ তাঁকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বলেন "হ্যাচসনকে কখনও ভোলা যায় না" । আর এক বিশাল ব্যক্তিত্ব ডেভিড হিউম কে স্মিথ তাঁর ভাল বন্ধু হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন।



জীবনের মধ্য ভাগ: শিক্ষক জীবন/ কর্মজীবন ও প্রকাশন

১৭৪৮ সালে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্মিথ পাবলিক বক্তৃতা প্রদান শুরু করেছিলেন। লর্ড কামসের পৃষ্ঠপোষকতায় এডিনবার্গের দার্শনিক সোসাইটি বক্তৃতামালার আয়োজন করে।

তাঁর বক্তৃতা বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত ছিল “অলঙ্কারশাস্ত্র এবং রম্যরচনা” এবং পরে যুক্ত হয় "the progress of opulence" বা "সমৃদ্ধির অগ্রগতি" বিষয়। এই পরবর্তী বিষয়টিতে, তিনি তাঁর অর্থনৈতিক দর্শন স্বাভাবিক / সহজাত স্বাধীনতা (natural liberty ) এর ব্যাখ্যা করেছিলেন সুস্পষ্ট এবং সহজ পদ্ধতিতে। যদিও স্মিথ প্রকাশ্যে কথা বলতে পারদর্শী নন , তবু তাঁর বক্তৃতাগুলো তখন খুব সফল হয়েছিল।

1751 সালে স্মিথ গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর পদ পান। ১৭৫২ সালে তিনি দ্য ফিলোসফিকাল সোসাইটি অফ এডিনবার্গের সদস্য নির্বাচিত হন। এক বছর পর গ্লাসগো’র নৈতিক দর্শনের প্রধান অধ্যাপক মারা গেলে,স্মিথ সেই প্রধান অধ্যাপকের পদটি অলংকৃত করেন। পরবর্তী ১৩ বছর ধরে একাডেমিক হিসাবে তিনি সেখানে কাজ করেছিলেন, যাকে তিনি "সবচেয়ে বেশি কার্যকর এবং তাঁর জীবনের সবচেয়ে সুখী এবং সম্মানজনক সময়" হিসাবে চিহ্নিত করেছেন।


1759 সালে স্মিথ এর Theory of Moral Sentiments পায়। সেখানে তার কয়েকটি গ্লাসগো বক্তৃতা স্থান পায় । এজেন্ট এবং দর্শক অথবা ব্যক্তি এবং সমাজের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে সহানুভূতি/ সহমর্মিতার উপর মানুষের নৈতিকতা নির্ভর করে। স্মিথ মনে করেন, নৈতিক অনুভূতির ভিত্তি হলো "পারস্পরিক সহানুভূতি" । তাঁর ব্যাখ্যাটি কোনও বিশেষ "নৈতিক বোধের" ভিত্তিতে নয় (যেমনটি তৃতীয় লর্ড শাফটসবাড়ি করেছিলেন এবং হ্যাচসন বা হিউমের উপযোগবাদের মতো তা নয়) বরং পারস্পরিক সহানুভূতির ভিত্তিতে পরিচালিত, যেখানে একে অপরের অনুভূতিগুলি সনাক্ত করার ক্ষমতা রাখে ।

Theory of Moral Sentiments প্রকাশের পরে স্মিথ মনোনিবেশ করতে শুরু করেন আইনশাস্ত্র এবং অর্থনীতির সম্পর্ক বিষয়ে। তাঁর বক্তৃতাগুলোতেও তখন নৈতিকতার তত্ত্ব এর পরিবর্তে অর্থনীতি এবং আইনশাস্ত্র বিষয়ক নানা ভাবনা স্থান পেতে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, স্মিথ তাঁর বক্তৃতায় বলেছিলেন যে, দেশের স্বর্ণ বা রৌপ্য এর পরিমাণ নয় বরং জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধির কারণ হলো শ্রম। অথচ দেশের স্বর্ণ বা রৌপ্য এর গুরুত্ব হলো বণিকবাদের ভিত্তি। সেই সময়কার পশ্চিমা ইউরোপীয় অর্থনৈতিক নীতিগুলিতে বণিকবাদ ছিল আধিপত্য বিস্তারকারী অর্থনৈতিক তত্ত্ব/ চিন্তাধারা ।


1762 সালে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় স্মিথকে ডক্টর অফ লস (এলএল ডি) উপাধি প্রদান করে । কিন্তু ১৭৬৩ সালের শেষ ভাগে চার্লস টাউনশেন্ড তাঁর সৎ ছেলে হেনরি স্কট এর শিক্ষার দায়িত্বভার (প্রাইভেট টিউটর হিসাবে) স্মিথের উপর অর্পণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। সেই পদ গ্রহণের সম্মতি দেন স্মিথ। তখন তিনি অধ্যাপক পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

স্কটের সাথে টিউটোরিংয়ের কাজ করতে করতে স্মিথের ইউরোপ ভ্রমণও হতে থাকে, সেই সময়ে তিনি স্কটকে শিষ্টাচার এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষিত করে তুলছিলেন। স্মিথ প্রথমে স্কটের শিক্ষক হিসাবে ফ্রান্সের টুলুজে ভ্রমণ করেছিলেন। সেখানে তিনি দেড় বছর অবস্থান করেন। তিনি টুলুজেকে কিছুটা ক্লান্তিকর/ বিরক্তিকর বলে মনে করেছিলেন। তিনি হিউমকে লিখেছিলেন যে, তিনি "সময় কাটানোর জন্য একটি বই লিখতে শুরু করেছেন"। ফ্রান্সের দক্ষিণে ভ্রমণ করার পরে, স্মিথসহ দলটি চলে যায় জেনেভাতে, যেখানে স্মিথ দার্শনিক ভোল্টায়ারের সাথে দেখা করেছিলেন। জেনেভা থেকে স্মিথসহ দলটি পরে প্যারিসে চলে আসে। এখানে, বেঞ্জামিন ফ্র্যাংকলিন এর সাক্ষাৎ পান স্মিথ এর সাক্ষাৎ পান। Quesnay এর প্রতিষ্ঠান ভূমিবাদি (Physiocracy) স্কুলও খুঁজে পান।




ফিজিওক্র্যাটরা বণিকবাদের এর বিরোধি ছিল, যেখানে তাদের অনুসৃত নীতি ছিল ‘ব্যক্তিতাবাদ’ (laissez -faire ) অনুসরণ, (Let do and let pass, the world goes on by itself!)

চতুর্দশ লুই ও পঞ্চদশ লুই এর আমলে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের মাধ্যমে দ্বারা ফ্রান্সের সম্পদ কার্যত হ্রাস পেয়েছিল। এ ছাড়াও ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আমেরিকান বিদ্রোহীদের সহায়তা করতে গিয়ে ফ্রান্স আরও ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। পণ্য ও সেবার অতিরিক্ত ব্যবহার (ভোগ) এর কোনো অর্থনৈতিক অবদান নেই বলে ধরে নিয়ে তাকে অনুৎপাদনশীল শ্রমের উৎস হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছিল। ফ্রান্সে কেবল কৃষিক্ষেত্রকেই দেশের সম্পদ বজায় রাখার একমাত্র অর্থনৈতিক খাত বলে ভাবা হতো। স্মিথ তা থেকে এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, সেই সময়ের ব্রিটিশ অর্থনীতির তুলনায় ফ্রান্সের বিদ্যমান ব্যবস্থা, "তার সমস্ত অসম্পূর্ণতা সত্ত্বেও [দি ফিজিওক্রেটিক স্কুল] সম্ভবত রাজনৈতিক অর্থনীতির ‘সত্য’-র নিকটতম অবস্থায় পোঁছেছিল। ফিজিওক্রেটিক ধারণাভিত্তিক উৎপাদনশীল বনাম অনুৎপাদনশীল শ্রমের মধ্যে পার্থক্য, ক্লাসিক্যাল অর্থনৈতিক তত্ত্বের বিকাশ বুঝতে সহায়তা করে।

1766 সালে, হেনরি স্কটের ছোট ভাই প্যারিসে মারা যায় এবং গৃহশিক্ষক হিসাবে স্মিথের সফরও তখন খুব দ্রুত শেষ হয়ে আসে। স্মিথ সে বছর দেশে (তাঁর জন্মস্থানে) ফিরে এসেছিলেন কির্ককাল্ডিতে। এর পরের দশকের বেশিরভাগ সময় তিনি তাঁর (magnum opus) লেখার জন্য ব্যয় করেছিলেন। ডেভিড হিউম এবং টমাস রেইড এর পৃষ্ঠপোষকতা স্মিথ অর্জন করেছিলেন। 1773 সালের মে মাসে, স্মিথ লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন এবং 1775 সালে তিনি সাহিত্য ক্লাবের সদস্য নির্বাচিত হন। 1776 সালে দ্য ওয়েলথ অফ নেশনস প্রকাশিত হয়েছিল এবং মাত্র ছয় মাসের মধ্যে প্রথম সংস্করণ এর সব কপি বিক্রি হয়ে গিয়েছিল ।


1778 সালে, স্মিথ স্কটল্যান্ডে কাস্টমস কমিশনার হিসাবে একটি পদে নিযুক্ত হন এবং মায়ের সাথে বস বাস করতে থাকেন। স্মিথের মা 1784 সালে মারা যান। পাঁচ বছর পরে, এডিনবার্গের দার্শনিক সোসাইটির সদস্য হওয়ার পর রয়্যাল সোসাইটি অফ এডিনবার্গের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের তিনি একজন হয়ে ওঠেন। ১৭৮৭ থেকে ১৭৮৯ সাল পর্যন্ত তিনি গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের লর্ড রেক্টরের সম্মানসূচক অবস্থান দখল করেছিলেন।

জীবনের শেষ ভাগ-

বেদনাদায়ক অসুস্থতার পরে স্মিথ 17 জুলাই 1790 এডিনবার্গের প্যানমুরে হাউজে মারা যান। তাঁর মরদেহ সমাহিত করা হয়েছিল ক্যাননগেট কির্কিয়ার্ডে। স্মিথ যখন মৃত্যু শয্যায়, তখন তিনি হতাশা প্রকাশ করেছিলেন যে, আরও অনেক কিছু করে যাওয়া / অর্জন করা তাঁর বাকি রয়ে গেলো!



স্মিথের ইচ্ছা (উইল ) অনুসারে তাঁর পাঠাগারটির মালিকানা ডেভিড ডগলাস কে দেওয়া হয় (তার কাকাতো ভাই কর্নেল রবার্ট ডগলাসের পুত্র), যিনি স্মিথের সাথে জীবনের শেষ দিনগুলোতে ছিলেন। অবশেষে সেটি পরে ডেভিড ডগলাস এর দু কন্যা , সিসিলিয়া মার্গারেট (মিসেস কানিংহাম) এবং ডেভিড অ্যান (মিসেস ব্যানারম্যান) এর মধ্যে বিভক্ত হয়েছিল।

স্মিথের প্রকাশিত নিবন্ধগুলোর বাইরে তাঁর ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি। তাঁর অনুরোধে ব্যক্তিগত কাগজপত্র তাঁর মৃত্যুর পরে নষ্ট করা হয়েছিল। তিনি কখনও বিয়ে করেননি।



স্মিথের ব্যতিক্রমী অবয়ব, চালচলন/অভ্যাস :

স্মিথের অদ্ভুত কিছু অভ্যাস ছিল এবং ছিল "অবিস্মরণীয় বিনম্রতা", যা তাঁর হাসি থেকে উপলব্ধি করা যেত। তিনি নিজের সাথে (একা একা ) কথা বলতেন। একটি অভ্যাস যা শৈশবকালেই শুরু হয়েছিল, যখন তিনি অদৃশ্য সাথীদের সাথে আলাপচারিতায় কথোপকথনে হাসতেন। এক বিবরণ অনুসারে, স্মিথ একদিন তাঁর নাইটগাউন পড়েই হাঁটতে বেরিয়েছিলেন এবং শহরের বাইরে ১৫ মাইল (২৪ কিমি) অবধি হেঁটেছিলেন, শেষে কাছাকাছি গির্জার ঘণ্টা তাঁকে বাস্তব সম্বিতে ফিরিয়ে আনে ।


সারা জীবন স্মিথ একটা স্নায়বিক যন্ত্রণায় কষ্ট পেয়েছেন, মাথা সব সময়ই অল্প অল্প কাঁপতো এবং বক্তৃতা দেয়ার সময় কথা কেটে কেটে বলার একটি বিরক্তিকর অভ্যাস ছিল। তার ছিল মারাত্মক আত্মভােলা স্বভাব। স্মিথের বয়স যখন প্রায় পঞ্চাশের কোঠা অতিক্রম করছে, এডিনবার্গের বাসিন্দারা প্রতি দিনই তাদের শহরের এ বিখ্যাত মানুষটিকে দেখতে পেত। চোখে একটা মানানসই চশমা, গায়ে হালকা রঙ-এর কোট, হাঁটু পর্যন্ত প্যান্ট, পায়ে সিল্কের সাদা মােজা, বকলেস লাগানাে জুতাে, মাথায় চ্যাপ্টা চওড়া কানওয়ালা বীবর চামড়ার তৈরী টুপি, হাতে বেতের ছড়ি, এবড়াে থেবড়ো রাস্তা দিয়ে তিনি বেড়াতে বেরিয়েছেন। দৃষ্টিতে থাকতো একটা অপার শূন্যতা, ঠোট দুটো অল্প অল্প কাঁপতো , যেন মনে মনে তিনি কিসের আলাপ করে চলেছেন। এক পা দু পা যাওয়ার পর একটু থামতেন, ইতস্তত করতেন, মনে হয় যেন পথ পাল্টাবেন, বুঝিবা বিপরীতমুখে চলবেন। খুব ছােটবেলা থেকেই স্মিথ মাঝে মাঝে যেন কি এক গভীর চিন্তার মধ্যে ডুবে যেতেন। তিনি যে শেষ পর্যন্ত একজন শিক্ষাবিদ হবেন শিশু বয়সেই একথা স্পষ্টভাবে বােঝা গিয়েছিল। স্মিথ দেখতে মোটেও সুপুরুষ ছিলেন না। তার গােলাকার মুখাবয়ব- ঠেলে বেরিয়ে-আসা ঠোঁট যেন ঈগল পাখীর চঞ্চুসদৃশ বাঁকানো নাকের আগাকে আলিঙ্গনে আগ্রহী। ভারী ভ্রুজোড়া ও চোখের পাতিগুলোর অন্তরাল থেকে উঁকি দেয় যেন দুটি বিস্ফোরিত অক্ষিগােলক। স্মিথের বক্তৃতা প্রতিবন্ধক মুখমণ্ডল , যা ছিল টালমাটাল, কিন্তু অমায়িক । [সূত্র: আর্থনীতিক দর্শনের ইতিবৃত্ত- হেলব্রোন, ১৯৭০]




কথিত আছে স্মিথ এক সময় নিজের চেহারাকে এমনই বিসদৃশ বলে স্বীকার করেছেন এবং বলেছিলেন, "আমি আমার বই ব্যতীত আর কিছু নয়।"["I am a beau in nothing but my books."]। তখনকার সময়ে ফটোর প্রচলন হয়নি, নিজ প্রতিকৃতির জন্য আর্টিস্টের সামনে সিটিং দিতে হতো। স্মিথ খুব কমই তাঁর প্রতিকৃতির জন্য সেরকম সিটিং দিতেন । তাই তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর প্রায় সব চিত্রই স্মৃতি থেকে আঁকেন আর্টিস্টরা।


কৃতজ্ঞতা : উইকিপেডিয়া (Wikipedia)


ধন্যবাদান্তে -


মনতোষ চক্রবর্তী




সূত্র:




113 views0 comments

Recent Posts

See All

Comments


bottom of page