১. অ্যাডাম স্মিথের প্রথম সাড়া জাগানো বই -এর নাম কি ? কত সালে তা প্রকাশিত হয়?২. এ বইটির প্রতি অ্যাডাম স্মিথের নিজস্ব অনুভূতি কি? ৩. অ্যাডাম স্মিথের ‘দ্য থিওরি অফ মরাল সেন্টিমেন্টস বইয়ের মূল উদ্দেশ্য/ লক্ষ্য কি?৪. অ্যাডাম স্মিথের ‘দ্য থিওরি অফ মরাল সেন্টিমেন্টস বইয়ের অন্যতম ভিত্তিমূলক তত্ত্বটি কি?৫. অ্যাডাম স্মিথের ‘দ্য থিওরি অফ মরাল সেন্টিমেন্টস এবং ‘দ্য ওয়েলথ অব নেশনস’ এর মধ্যে মৌলিক পার্থক্য কি? ৬. অ্যাডাম স্মিথের ‘দ্য থিওরি অফ মরাল সেন্টিমেন্টস এবং ‘দ্য ওয়েলথ অব নেশনস’ - উভয় গ্রন্থে কোথায় মিল বা তাদের কমন উপাদান কি?
----
1759 সালে, অ্যাডাম স্মিথ তাঁর প্রথম কাজ - ‘দ্য থিওরি অফ মরাল সেন্টিমেন্টস’ প্রকাশ করেছেন, আর আ-মৃত্যু বইটিতে ব্যাপক পরিমার্জন ও সংশোধন করে গেছেন। যদিও ‘দ্য ওয়েলথ অফ নেশনস’, স্মিথের সবচেয়ে প্রভাবশালী কাজ হিসাবে বিবেচিত, তবুও স্মিথের নিজের দৃষ্টিতে থিওরি অফ নৈতিক অনুভূতির তত্ত্ব ছিল একটি উচ্চতর/ উৎকৃষ্টতর কাজ।
স্মিথ তাঁর সময়ের নৈতিক চিন্তাভাবনাকে সমালোচকের দৃষ্টিতে পরীক্ষা করে দেখেন যে, গতিশীল এবং অন্ত-ক্রিয়াভিত্তিক (ইন্টারেক্টিভ) সামাজিক সম্পর্ক থেকে বিবেকের উত্থান ঘটে, যার মাধ্যমে মানুষ "সংবেদনগুলির পারস্পরিক সহানুভূতি" কামনা করে। গ্রন্থটি লেখার লক্ষ্য ছিল নৈতিক বিচারবোধ গঠনে মানবজাতির ক্ষমতার উৎসটি ব্যাখ্যা করা। ধরে নেওয়া হয় যে, কোনরকম নৈতিক অনুভূতি ছাড়াই মানুষ তার জীবন শুরু করে। স্মিথ ‘সহানুভূতি তত্ত্ব’ (Theory of sympathy ) এর প্রস্তাব দিয়েছেন। অন্যকে পর্যবেক্ষণ করা এবং নিজের আচরণকে উপলব্ধি করার মাধ্যমে মানুষ নিজের সম্পর্কে এবং অন্যরা কীভাবে তাদের আচরণকে উপলব্ধি করে, এ বিষয়ে সচেতন হয়। অন্যের বিচারবোধ উপলব্ধি (পর্যবেক্ষণ ও কল্পাশ্রয়ীর মাধ্যমে) করার মাধ্যমে আমরা যে প্রতিক্রিয়া পাই, তা " একে অপরের অনুভূতির প্রতি সহানুভূতি" অর্জনের জন্য একটি উৎসাহ তৈরি করে। আর মানুষকে তার অভ্যাস এবং তারপর নীতি- আচরণ বিকাশের দিকে পরিচালিত করে, যার মাধ্যমে নিজের বিবেক(conscience ) গঠিত হয়।
কিছু পণ্ডিত ব্যক্তি ‘নৈতিক অনুভূতি তত্ত্বের’ এবং ‘দ্য ওয়েলথ অফ নেশনস’-র মধ্যে দ্বন্দ্ব অনুধাবন করেছেন। প্রথমটিতে ‘অন্যদের প্রতি সহানুভূতি’র উপর জোর দেওয়া হয় , আর পরবর্তীটিতে ‘স্বার্থের ভূমিকা’এর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয় বা মনোনিবেশ করা হয়। অবশ্য বর্তমানে কিছু গবেষক যুক্তি দেখিয়েছেন যে, স্মিথের দুটো গ্রন্থের মধ্যে প্রকৃত অবস্থায় কোনও বৈপরীত্য নেই। তাঁরা দাবি করেন যে, থিওরি অফ মোরাল সেন্টিমেন্টস-এ, স্মিথ মনোবিজ্ঞানের একটি তত্ত্ব বিকাশ সাধন করেছেন, যাতে বাইরের পর্যবেক্ষকরা তাঁদের অনুভূতির প্রতি সহানুভূতি লাভ করার (স্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষার ফলস্বরূপ) জন্য "নিরপেক্ষ দর্শকের" অনুমোদন চান। মানব প্রকৃতির বিচিত্র মতামত উপস্থাপন এর দৃষ্টিকোণ থেকে ‘নৈতিক অনুভূতির তত্ত্ব’ ও ‘জাতিদের ধন-সম্পদ’ কে বিচার না করে বরং বিভিন্ন পরিস্থিতির ভিত্তিতে মানব প্রকৃতির বিভিন্ন দিক বিবেচনার আঙ্গিকে গ্রন্থ দুটি বিবেচনা করা যৌক্তিক । ওটেসন (Otteson) যুক্তি দেখান যে, উভয় বই-ই তাদের পদ্ধতিগত দিক থেকে ‘নিউটনীয়’ এবং উভয় বইতে নৈতিকতা, অর্থনীতি এবং ভাষাসহ বৃহত্তর মানবিক আদর্শের সৃজন ও বিকাশের ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য একটি সদৃশ(similar ) "বাজার মডেল" উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে এ প্রসঙ্গে একেলুন্ড এবং হেবার্ট পৃথক পৃথক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছেন। তাঁরা পর্যবেক্ষণ করেছেন যে, উভয় গ্রন্থে ‘স্বীয় স্বার্থ’(self - interest ) বিষয়টি উপস্থিত রয়েছে। তবে প্রথম গ্রন্থটির ক্ষেত্রে ‘সহানুভূতি’ (sympathy) হ'ল নৈতিক অনুষদ (moral faculty), যা স্বার্থ অর্জন ও সংরক্ষণে সংযমী করে তোলে। দ্বিতীয় গ্রন্থে ‘প্রতিযোগিতা’ হ'ল অর্থনৈতিক অনুষদ(economic faculty), যা সংযত রাখে স্বার্থকে।
কিছু প্রশ্ন ও উত্তর :
১. অ্যাডাম স্মিথের প্রথম সাড়া জাগানো বই -এর নাম কি ? কত সালে তা প্রকাশিত হয়?
উঃ অ্যাডাম স্মিথের প্রথম সাড়া জাগানো বই -‘দ্য থিওরি অফ মরাল সেন্টিমেন্টস (১৭৫৯)
২. এ বই টির প্রতি অ্যাডাম স্মিথের নিজস্ব অনুভূতি কি?
উঃ স্মিথ ‘দ্য থিওরি অফ মরাল সেন্টিমেন্টস (১৭৫৯) বইটিকে তাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ বলে মনে করতেন, যদিও অন্যদের চোখে তাঁর ‘দ্য ওয়েলথ অব নেশনস ‘ হলো শ্রেষ্ঠ কীর্তি। তবে স্মিথ মোরাল সেন্টিমেন্টস বইটিকে এটি ভালোবাসতেন যে, তা প্রকাশের পর থেকে আমৃত্যু বারে বারে পরিমার্জন করে গিয়েছেন।
৩. অ্যাডাম স্মিথের ‘দ্য থিওরি অফ মরাল সেন্টিমেন্টস বইয়ের মূল উদ্দেশ্য কি?
উঃ গ্রন্থটি লেখার উদ্দেশ্য /লক্ষ্য ছিল নৈতিক বিচারবোধ গঠনে মানবজাতির ক্ষমতার উৎসকে ব্যাখ্যা করা।
৪. অ্যাডাম স্মিথের ‘দ্য থিওরি অফ মরাল সেন্টিমেন্টস বইয়ের অন্যতম ভিত্তিমূলক তত্ত্ব কি? উঃ ‘সহানুভূতি তত্ত্ব’ (Theory of sympathy )
৫. অ্যাডাম স্মিথের ‘দ্য থিওরি অফ মরাল সেন্টিমেন্টস এবং ‘দ্য ওয়েলথ অব নেশনস’ এর মধ্যে মৌলিক পার্থক্য কি?
উঃ প্রথমটিতে ‘অন্যদের প্রতি সহানুভূতি’র উপর জোর দেওয়া হয় , আর পরবর্তীটিতে ‘স্বার্থের ভূমিকা’এর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
প্রথম গ্রন্থটির ক্ষেত্রে ‘সহানুভূতি’ (sympathy) হ'ল নৈতিক অনুষদ (moral faculty), যা স্বার্থ অর্জন ও সংরক্ষণে সংযমী করে তোলে। দ্বিতীয় গ্রন্থে ‘প্রতিযোগিতা’ হ'ল অর্থনৈতিক অনুষদ, যা সংযত রাখে স্বার্থকে।
৬. অ্যাডাম স্মিথের ‘দ্য থিওরি অফ মরাল সেন্টিমেন্টস এবং ‘দ্য ওয়েলথ অব নেশনস’ - উভয় গ্রন্থে কোথায় মিল বা তাদের কমন উপাদান কি?
উঃ উভয় গ্রন্থে কমন উপাদান হলো ‘স্বীয় স্বার্থ’(self - interest ) এর উপস্থিতি ।
Comments