top of page
Search
  • Writer's pictureProf Manotosh Chakravarty

Birthplace of Social Isolation - Story of the Village Eyam

সোশ্যাল আইসোলেশনের সূতিকাগার-'ইয়েম' গ্রামের কাহিনী - ইতিহাসের জীর্ণ পাতা আজ আবারও সমুজ্জ্বল


- প্রফেসর মনতোষ চক্রবর্তী



সারা পৃথিবীতে লকডাউন চলছে করোনা ভাইরাসের (COVID-19) কারণে। দীর্ঘদিন সবাই ঘরবন্দী ও সোশ্যাল আইসোলেশন এর নিয়মও মেনে চলেছেন। তবে অনেকেই হাঁফিয়েও উঠেছেন, এটিও বুঝা যায়। আসুন তাই একটি কাহিনী শোনাই । ৩৫০ বছর আগের বাস্তব কাহিনী। এ থেকে আপনাদের উপলব্ধি আসবে - এরকম হাঁফিয়ে ওঠা বা ক্লান্তির এখনি কিছু ঘটেনি। সবে তো সন্ধ্যে ! এর চেয়েও অনেক কঠিন লকডাউন মানুষ ভোগ করেছে বিশ্ব-কল্যাণের জন্যে।]



ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেয়া একটি ছোট্ট গ্রাম- Eyam, UK এর ডার্বিশায়ারের অন্তর্গত । ৩৫০ বছর আগে যা ঘটেছিল এ গ্রামে, তার ইতিকাহিনী থেকে জানা যায় - কতটা আত্মত্যাগে মহীয়ান হয়ে আছে এ গ্রাম। সপ্তদশ শতাব্দীতে / ১৬৬৫-৬৬তে UK তে দেখা দিয়েছিল ভয়ংকর প্লেগ(Bubonic Plague) এবং তারই সূত্র ধরে ইতিহাসের পাতায় স্থান পেয়েছে Eyam. এ গ্রামটি আত্মত্যাগ ও সহমর্মিতার অনন্য দৃষ্টান্ত হিসাবে আজ ঘুরে ফিরছে ২০২০ এর চলতি করোনা ভাইরাসে ভীত-সন্ত্রস্ত বিশ্ববাসীর মধ্যে। ইতিহাসের পাতায় একদিকে Eyam বিখ্যাত , আরেক দিকে তা অখ্যাতও । চরম ত্যাগ ও পরার্থপরতার দৃষ্টিকোণ থেকে তা বিখ্যাত ও অনন্য এবং সেই সাথে মৃত্যু- বিভীষিকাময় ঘটনার স্বাক্ষী হিসেবে তা অখ্যাত ও বেদনারও । তবে চলতি ঘটনা প্রবাহের সাথে মিল থাকায় আজ মানবতায় আস্থা ও বিশ্বাস জাগানিয়ার কান্ডারি হিসাবে Eyam এর নাম আজ অনুরণিত।



Eyam গ্রামে ১৬৬৫ তে এক দর্জি ছিলেন - নাম হলো আলেকজান্ডার হ্যাডফিল্ড। তিনি গ্রামের মানুষদের জামা কাপড় তৈরীর জন্য লন্ডন থেকে এক bale কাপড় আনালেন। তাঁর জানার বাইরে তা থেকে মর্মান্তিক অঘটন এর সূত্রপাত হলো। কালো মৃত্যুর ছোবলে এক বছরের মধ্যে মারা গেলো Eyam এর ৭৫০ জনের মধ্যে ২৬০ জন, অর্থাৎ প্রায় এক তৃতীয়াংশ।



দর্জি আলেকজান্ডারের সহকারী ছিলেন জর্জ ভিক্কারস। ভিক্কারস কাপড়ের রোলটি খুলতে গিয়ে দেখে যে তা অনেকটা ভিজেভিজে ও দুর্গন্ধময়। তাই কাপড়ের রোলটি শুকানোর জন্য আগুনের কাছাকাছি তিনি রাখলেন। যতই কাপড়ের রোলটি গরম হতে লাগলো, সেই রোলের মধ্যে লুকিয়ে থাকা মাছিগুলো বের হয়ে আসতে লাগলো । কিছু মাছি উড়ে এসে জর্জ ভিক্কারস-এর শরীরের উপরও বসল। আরও ভয়ানক কান্ড ! সাত দিনের মধ্যেই মারা গেল ভিক্কারস, তার ক`দিন পর তার দুই ছেলে এবং তার নিকট এক প্রতিবেশীও মারা যায় ।




২/৩ সপ্তাহের মধ্যে গ্রামের আরো ৫জন মারা যায়। মানুষ বুঝতে পারলো যে লন্ডনের প্লেগ গ্রামেও হানা দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা গ্রাম প্রধান( রেক্টর) রেভারেন্ড উইলিয়াম মোম্পেশন এর শরণাপন্ন হয়।




তিনি পরামর্শ দিলেন নিজেদেরকে অন্তরীণ/ কোয়ারেন্টাইন করতে হবে। এমনভাবে তা করতে হবে যাতে গ্রামে কেউ প্রবেশ করতে না পারে , আবার কেউ যেন গ্রাম থেকে বের হতেও না পারে।

রেভারেন্ড মোম্পেশন এর যুক্তি ও পরামর্শ থেকে গ্রামবাসিরা এটা বুঝতে পারল যে, তাদের এ ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে অনেকেই হয়ত তারা বাঁচতে পারবেন না, তবে তাঁরা এও বুঝলেন যে, কোয়ারেন্টাইন তথা আইসোলেশন দ্বারা তাঁরা অপরের মৃত্যুর কারণ/ দায়ী অন্তত হবেন না। স্বেচ্ছাবন্দীত্ব মেনে নিয়ে self-sacrifice -র এক অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন Eyam এর অধিবাসীরা।





গ্রামবাসীরা মানসিক জোর ফিরিয়ে এনে সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন- তারা পাথর দিয়ে গ্রামের সীমানা চিহ্নিত করলেন।




অসংখ্য মানুষদের বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াসে নিজেদেরকে তারা মৃত্যু ঝুঁকির মধ্যে আবদ্ধ রাখলেন। গ্রামবাসীরা নিজেদেরকে গৃহে অন্তরীণ করে রাখলেন। সেদিনের গ্রামবাসীদের এ অভূতপূর্ব আত্মত্যাগ ও অপরকে বাঁচানোর তাগিদে মরণের কাছে নিজেদের আত্মবিসর্জন- Eyam কে যুগ যুগ ধরে মহিমান্বিত করে রেখেছে । স্বেচ্ছাবন্দীত্ব কার্যকর করার জন্য তারা পাথর দিয়ে গ্রামের চারপাশের সীমানা চিহ্নিত করেছিলেন, যাতে কেউ গ্রামের ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে , আর তারাও যেন কেউ সেই সীমানার বাইরে না যান (অর্থাৎ রোগ যেন বাইরে ছড়াতে না পারে )।




গ্রামে প্লেগ ছড়িয়ে পড়ার প্রথম দিকে কেউ কেউ ভেবেছিলেন যে নিকটবর্তী নগরী শেফিল্ডে তারা পালিয়ে যাবেন, কিন্তু রেভারেন্ডের উপদেশে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাদের চিন্তা জাগ্রত হলো - শেফিল্ডে বা ম্যানচেস্টারে গেলে হয়তো অগণিত মানুষকে তারা মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবেন, আর তারাও যে সেখানে বেঁচে থাকতে পারবেন, সেই নিশ্চয়তাও তো নেই। বিবেক বোধের তাড়নায় রেভারেন্ড উইলিয়াম মোম্পেশন নির্দেশ দিলেন মৃতদেহ যেন গ্রামের গির্জা প্রাচীরের কাছে কবরস্থানে যেন কবরস্থ করা না হয়। গ্রামের শেষ সীমানায় দূরবর্তী জমি ও বাগানে যেন মৃতদের সমাহিত করা হয়, এ অনুরোধ রাখলেন তিনি।




গির্জার অভ্যন্তরে মৃতের প্রতি শ্রদ্ধানুষ্ঠান এর ক্রিয়াকর্ম সম্পন্নকরণ স্থগিত করে গির্জার বাইরে মুক্ত আকাশের নিচে তার ব্যবস্থা তিনি করলেন। সেই সাথে সমাগত মানুষদের একে অপর থেকে দূরত্বে দাঁড়ানোর অনুরোধ তিনি জানান।





এভাবে ৩৫০ বছর আগে মহামারীতে ‘সামাজিক দূরত্ব’ (social isolation) এর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিল Eyam এর অধিবাসীরা।

Eyam এর অবরুদ্ধ (lockdown) গ্রামবাসীরা যাতে তাদের খাদ্য, পানীয় ও অন্যান্য অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী পেতে পারে , তার জন্য গ্রামের বাইরের মানুষরা স্বপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসে । তবে গ্রামের সীমানায় তারা প্রবেশ করে নি। সীমানা ফলক হিসাবে রাখা প্যারিশ- স্টোনের উপর তারা দ্রব্যসামগ্রী রেখে




যেতেন, আর গ্রামবাসীরাও বিনিময়ে প্যারিশ- স্টোনের নির্দিষ্ট গর্তে ভিনেগার ঢেলে মুদ্রা (coins) রেখে দিতেন। ভিনেগারের স্স্টেরিলাইজ / জীবাণুমুক্তকরণ ক্ষমতা সম্পর্কে তারা যে অবহিত ছিলেন, এ বিষয়টি থেকে তা অনুধাবন করা যায়। Eyam এর সেই সীমানা পাথর আজও স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে সেখানে আছে।





Eyam এর ইতিকাহিনী ও চলতি ঘটনা পরিস্থিতির মধ্যে (বিশেষ করে প্লেগ ও করোনা ভাইরাস এ দুয়ের ) তুলনা করার যুক্তি নেই বলে কেউ কেউ গোঁ ধরে বসতে পারেন। তাঁদের উদ্দেশ্যে বলি - এই কাহিনীর মূল শিক্ষাটির প্রতি কেবল আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ , যদিও প্লেগ ও করোনা ভাইরাস এর মধ্যে মৌলিক পার্থক্যতো আছেই ।


Eyam এর ইতিকাহিনী থেকে মূল শিক্ষণীয় বিষয়গুলো হলো-

কেন গ্রামবাসীরা মৃত্যু জেনেও স্বেচ্ছাবন্দীত্ব / সামাজিক একাকীত্ব মেনে নিয়েছিল? তাদের লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার উদ্দেশ্য ছিল রোগের বিস্তার যেন না ঘটে। শুধু নিজেকে নয় , অন্যদেরও যেন রোগ থেকে বাঁচানো যায়। নিজেদের জীবনের বিনিময়ে মানবতায় আস্থা যখন বড় হয়, এর চেয়ে মহত্বের কাজ আর কি হতে পারে ! বর্তমানের COVID-19 তে লকডাউন , সামাজিক দূরত্ব, পরিচ্ছন্নতা বজায়, জীবাণুমুক্তকরণ - এসবের শিক্ষা আমরা তৎকালীন Eyam এর বাসিন্দাদের কাছ থেকে পাই।




আরো উল্লেখযোগ্য যে Eyam এর উত্তরসূরিরা আজ মহানায়ক বা সুপার হিরো হিসাবে স্বীকৃতি পেতে চলেছেন। কারণটি জেনে নেওয়া যাক। 2000 সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ডের ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট একটি জরীপ পরিচালনা করে, তৎকালীন Eyam এর উত্তরসূরি হিসাবে 100 ব্যক্তির DNA স্যাম্পল সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে। সেই বিশ্লেষণ থেকে জানা যায় যে, সেই গ্রামের গড় অনুপাতের বেশি অধিবাসীদের জেনেটিক মিউটেশন বিরাজ করছে, যাকে বলা হয় CCR-৫ - Delta -৩২ বা শুধুই ডেল্টা-৩২ এবং সেই সুবাদে তারা Bubonic Plague এর বিরুদ্ধে ইমিউনিটি(প্রতিরোধী ক্ষমতা) অর্জনকারী। Eyam গ্রামের সব মানুষই প্লেগ এর সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েই (এক্সপোজড) ছিল। যাঁদের মিউটেশন ছিল না, তারা মৃত্যু বরণ করলেন, আর যাঁদের মিউটেশন হলো ও ইমিউনিটি(প্রতিরোধী ক্ষমতা) অর্জন করলেন , তারা বেঁচে রইলেন। তাদের সন্তান সন্ততিরাও বংশধারার মাধ্যমে সেই ইমিউনিটি(প্রতিরোধী ক্ষমতা) অর্জন করলো। আজ ৩৫০ বছর পরেও তারা সেই ইমিউনিটি(প্রতিরোধী ক্ষমতা) এর অধিকারী। আরো জানা গেলো যে, বাবা মা উভয়েই যদি ডেল্টা-৩২ মিউটেশন এর অধিকারী হয়, তবে তাদের সন্তানরাও শুধু প্লেগ নয়, HIV ও AIDS এর বিরুদ্ধেও ইমিউনিটিও (প্রতিরোধী ক্ষমতা) অর্জন করে।




Eyam গ্রামের অনন্য দৃষ্টান্ত থেকে আমরা আশাবাদী হতে পারি এই ভেবে যে, চলতি করোনা ভাইরাস এর বিরুদ্ধেও মানবজাতি টিকে থাকবে এবং ভবিষ্যৎ বংশধররা ইমিউনিটি(প্রতিরোধী ক্ষমতা) এর অধিকারী হয়ে বেঁচে থাকবে। জয়তু Eyam!



কৃতজ্ঞতা স্বীকার :

উইকিপেডিয়া

ইয়েম মিউজিয়াম -হোম

হিস্টোরিক ইউ, কে





ধন্যবাদ অন্তে - প্রফেসর মনতোষ চক্রবর্তী




210 views1 comment

Recent Posts

See All

ความคิดเห็น


bottom of page