top of page
Search
  • Writer's pictureProf Manotosh Chakravarty

COVID-19 and Positivity


কোভিড- ১৯ আবহে আশা-নিরাশা-বাস্তবতা

-মনতোষ চক্রবর্তী

কোভিড- ১৯ অতিমারী মানুষকে আশাবাদ ও হতাশাবাদ এই দুই গ্রুপে বিভক্ত করে ফেলেছে। অতিরিক্ত আশাবাদী যারা, তারা ঝুঁকিকে ঝুঁকি বলে মনে করে না, তারা মনে করে আমরা আক্রান্ত হব না; আমরা মাস্ক পড়বো না ; স্যানিটাইজার ব্যবহার করব না; অবস্থানিক দূরত্ব এড়িয়ে চলব না; জীবনের সুখ অনুসন্ধানের জন্য আমরা জীবন-কে যথেচ্ছা পরিচালিত করব।

আর যারা নিরাশাবাদী, তারা ঝুঁকির ক্ষেত্রে বেশি সংবেদনশীল; তারা বাড়ির বাইরে যেতে সাহসী নয়; শিশুদেরকে বাড়ির আঙিনায় খেলতে দিতে নারাজ ; শুচিবায়ুও চিরস্থায়ী আসন গেড়ে বসেছে - এ সব মনোভাব মঙ্গল জনক হতে পারে না। বিঘ্নিত পারিবারিক শান্তি , ফাঁটল প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্কে - এসব নিয়ে কি জীবন চলে সুন্দর পথে ?

না অতি আশাবাদী না হতাশাবাদী, বরং বাস্তববাদী হওয়া ‘কোরোনা’- ঝুঁকি মোকাবেলায় অধিক কার্যকর বলে ধারণা করা যায়। বিজ্ঞানসম্মত চিন্তাভাবনা মাথায় রেখে সীমিত ঝুঁকি গ্রহণ করে জীবন পরিচালনা করা উত্তম। কাজেই আশাবাদ অথবা নিরাশাবাদ অথবা শূন্যবাদ ‘কোরোনা’ মোকাবেলার উপযুক্ত রেসিপি নয় বরং আশাবাদ ও বাস্তবতাবাদ এই দুইয়ের সমন্বিত জীবনধারা সেখানে কাম্য হতে পারে। আর তাতেই দীর্ঘমেয়াদী মঙ্গল অর্জন সম্ভব।

প্রচলিত ধারণা - একটি সুখী ও অর্থবহ জীবনযাপনের উৎস নিহিত আছে ইতিবাচক মনোভাব ও মানসিকতা বজায় রাখার মধ্যে। আমরা যা চিন্তা ভাবনা করি এবং যে দর্শনের উপর আস্থা রেখে ভাবতে থাকি, সেই ভাবনাগুলোই একসময় বাস্তব হয়ে ওঠে। তাই অনেক সময় মনে হয়- যে যেরকমটা ভাবে, সেভাবেই তার ভাবনাগুলো তার জীবনে এক সময় প্রতিফলিত হয়। তাই অনেকেই বলে থাকেন ইতিবাচক চিন্তা করুন, তাহলে সেই ইতিবাচক ফল জীবনে পাওয়া যাবে। এ ধরনের ইতিবাচক ভাবনা যাকে আমরা অপটিমিজম বা আশাবাদ বলতে পারি, সেই ভাবনা আমাদেরকে সবসময় সুখের দিকে তাড়িত করবে, এমনটি ভেবে নেওয়া ঠিক নয়।

ইতিবাচক ভাবনা যদি এমন হয় যে, আমি দশ কোটি টাকা উপার্জন করতে যাচ্ছি কারণ আমি সর্বদাই বিশ্বাস করি যে, আমি দশ কোটি টাকা উপার্জন করবো। এ ধরনের ভাবনাকে যদি ইতিবাচক বলে ধরে নেয়া হয় এবং তা একসময় বাস্তব হবে বলে স্বপ্নে বিভোর থাকি, আর সেই ভাবনা ও বিশ্বাস নিয়ে যদি বসে থাকি, তাহলে হয়তো তা কোনদিনই কার্যকর হবে না। কারণ ভাবনাকৃত লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হলে ভাবনার সাথে পরিকল্পনা ও কর্মপ্রচেষ্টার সাযুজ্য বিধান করতে হবে। আর যখন মানুষের ভাবনা / মানুষের চাওয়া বাস্তবায়িত হয় না, তখন সে বেশি করে হতাশ হয় ও দুঃখবোধ তাকে পেয়ে বসে। কাজেই সেই অনিবার্য হতাশা বা দুঃখের কারণ কিন্তু ইতিবাচক ভাবনার ওপর অতি-বিশ্বাস ।

ভ্রান্তিমূলক অতি - বিশ্বাস, তা যদি নিজের কাছে ইতিবাচকও হয় , তার ভিত্তিতে গৃহীত পরিকল্পনা নেতিবাচক ফলাফল দিতে পারে। এমন অনেক ব্যক্তি আছেন যারা ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা নিয়েই জীবন কাটিয়ে দিচ্ছেন, কিন্তু তারা ভবিষ্যৎ নিয়ে বাস্তববাদী হতে পারছেন না এবং তাদের মনের মধ্যে সবসময়ই যেটি কাজ করে সেটি হল ইতিবাচকতায় নিজেকে মগ্ন রাখলে তা একসময় মঙ্গলময় হয়ে উঠবে। কিন্তু জীবনের কোন এক প্রান্তে এসে যখন এই উপলব্ধি আসে- কিছুই তো হল না, তখন দুঃখবোধ তাকে আরো পেয়ে বসে। কাজেই ইতিবাচক মনোভাব থাকলেই আপনাআপনি সাফল্য আসবে এটি চিন্তা করা ভুল।

যারা আশাবাদী তারা সময়ের পরিক্রমায় যখন দেখে তাদের ভাবনাগুলো ক্রমান্বয়ে তাদেরকে দুঃখের দিকেই ঠেলে দিচ্ছে তখন যে হতাশা ও দুঃখবোধ আসে এর জন্য তাদের কোনো মানসিক প্রস্তুতি ছিল না। এ অবস্থায় বরং তাদের মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

অপরদিকে নেতিবাচক ভাবনার ধারকরা সবসময়ই দুঃখবোধের মধ্যে থেকে দুঃখ সম্পর্কে একটি একটি প্রতিরোধ শক্তি নিজেদের মনের মধ্যে গড়ে তুলতে পারে। কোন ব্যর্থতাকেই সে যেন আমল দিতে চায় না। কাজেই ‘দুঃখ দিয়ে জীবন যাদের গড়া, তাদের আবার দুঃখ কিসের!’- এ ভাবনায় সে জয়ী হতে পারে। কিন্তু প্রডাক্টিভিটি বা উৎপাদনশীলতার দৃষ্টিকোণ থেকে এই ভাবনা বাস্তবোচিত হতে পারে না। কারণ সব সময়ই তারা খারাপ কিছু প্রত্যাশা করছেন, এতে তাদের মানসিক সুস্থতা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে এবং তাই তারা কখনো জীবনের উৎপাদনশীলতাকে উচ্চ স্তরে নিয়ে যেতে পারেন না।

তবে কি আশাবাদী না হয়ে অর্থাৎ ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ না করে বরং নেতিবাচক বা হতাশবাদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা বা নিজের মধ্যে স্থান দেওয়া বেশি কাম্য ? উত্তর হলো- না, সেটিও কাম্য হতে পারে না। নেতিবাচক মনোভাব বা হতাশাবাদ সব সময় মানুষকে নিচের দিকে টেনে রাখে এবং প্রতিনিয়ত হতাশ ব্যক্তি জীবনের লোকসান ছাড়া আর কিছুই দেখেন না। কাজেই সেই নেতিবাচক মনোভাব জীবনকে কখনো সুন্দর করতে পারে না।

ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক মনোভাব, কোনটিই মানুষকে সর্বোত্তম সাফল্যে টেনে নিয়ে যেতে পারে না। তার চাইতে বাস্তববাদিতা অনেক ভালো ফল দিতে পারে। যে ব্যক্তি আশাবাদী এবং সে তার আশাকে বাস্তবের সাথে মিলিয়ে নিয়ে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, সেই ব্যক্তি সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছতে পারবে বলে আশা করা যায়।

অবাস্তব আশাবাদিতা যেমন কাম্য নয়, তেমনি শূন্যবাদ ও নেতিবাচক মনোভাবও জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে না। তাহলে জীবনের সর্বোত্তম মানসিকতা যা কাম্য, তা হলো আশাবাদী ও বাস্তববাদী মনোভাবের সমন্বয়। জীবনে ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা আছে, সেটি মেনে নিয়েই বাস্তব বিজ্ঞানসম্মত ভাবনা চিন্তা, জীবনের সাফল্য এনে দিতে পারে।

ধন্যবাদ অন্তে- মনতোষ চক্রবর্তী

(কৃতজ্ঞতা স্বীকার: জন এন্ডারের এবং তাঁর একটি পোস্ট, যার ছায়া অবলম্বনে চলতি নিবন্ধটি লিখিত । )


33 views0 comments

Recent Posts

See All

Comments


bottom of page