top of page
Search
  • Writer's pictureProf Manotosh Chakravarty

Economic Liberalism

অর্থনৈতিক উদারনীতি / অর্থনৈতিক উদারবাদ

(Economic Liberalism)

-মনতোষ চক্রবর্তী



১. অর্থনৈতিক উদারনীতি / অর্থনৈতিক উদারবাদ কী ?(What is economic liberalism ?)

অর্থনৈতিক উদারনীতি / অর্থনৈতিক উদারবাদ হলো একটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মতাদর্শ, যেখানে সম্পদ বা উপাদানের উপর ব্যক্তিগত অধিকার(private property rights ) যেমন স্বীকৃত, তেমনি বাজার অর্থনীতি(market economy) তথা মুক্ত দাম ব্যবস্থা(free price mechanism ) কে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের ভিত্তি হিসাবে মেনে নেওয়া হয়।


২. অর্থনীতিতে সরকারী হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে অর্থনৈতিক উদারবাদে কি বলা হয় ?

অর্থনৈতিক উদারপন্থীরা মুক্ত বাণিজ্য ও খোলা প্রতিযোগিতায় যাতে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয় , সেজন্যে অবাধ বাজারে সরকারী হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করেন , কিন্তু আবার সম্পত্তি-অধিকার ও বাজার ব্যর্থতার সমাধান হিসাবে সরকারী হস্তক্ষেপকে সমর্থন করেন ।


৩. ধ্রুপদি উদারবাদ (Classical liberalism) এর প্রতিনিধিত্বকারী হিসাবে অর্থনৈতিক উদারনীতি কেন উদার পুঁজিবাদ(liberal capitalism) বা উদার অর্থনীতি(liberal economy) হিসাবেও বিবেচিত হয় ?

ধ্রুপদি উদারবাদ (Classical liberalism) এর অর্থনৈতিক প্রকাশ / অভিব্যক্তি/ প্রতিনিধিত্বকারী হিসাবে অর্থনৈতিক উদারনীতি বর্ণিত হয়। একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে অর্থনৈতিক উদারনীতি ব্যক্তি(ব্যষ্টিক) ভাবনার সারি / লাইন থেকে সংগঠিত হয়ে থাকে । এর অর্থ হল সমষ্টিগত/ যৌথ প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা বা সরকার নয় , ব্যক্তি বা পরিবারগুলোর দ্বারাই সম্ভাব্য সর্বাধিক সংখ্যক অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একটি অর্থনীতি যখন ব্যক্তিগত মূলধন বা সম্পদ ভিত্তিক স্বাধীন উদ্যোগ এর নিয়ম-কানুন অনুযায়ী পরিচালিত হয়, তখন তাকে উদার পুঁজিবাদ(liberal capitalism) বা উদার অর্থনীতি(liberal economy) হিসাবেও বর্ণনা করা যায়।


৪. অর্থনৈতিক উদারনীতিকে অর্থনীতির কোন কোন শক্তির বিরুদ্ধ শক্তি হিসাবে বিবেচনা করা হয় ?

মুক্ত বাজার ও ব্যক্তিগত মূলধন সম্পদের মালিকানা সংশ্লিষ্ট মতাদর্শ হলো অর্থনৈতিক উদারনীতি । ঐতিহাসিকভাবে বণিকবাদ / বাণিজ্যবাদ (mercantilism) ও সামন্তবাদ( feudalism) এর বিরুদ্ধ শক্তি হিসাবে অর্থনৈতিক উদারনীতির উদ্ভব ঘটে । আজকাল অবশ্য , সমাজতন্ত্র ও পরিকল্পিত অর্থনীতির ন্যায় অ-পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ধারার বিরুদ্ধ শক্তি/ ধারা হিসাবে অর্থনৈতিক উদারনীতিকে বিবেচনা করা হয়। এছাড়া মুক্ত বাণিজ্য এবং খোলা বাজারের প্রতি সমর্থন জানানোর কারণে অর্থনৈতিক উদারনীতিকে সংরক্ষণবাদ(protectionism) এর বিপরীত শক্তি হিসাবেও দাঁড় করানো হয় ।


৫. অর্থনৈতিক উদারবাদে কোন কোন অর্থনৈতিক প্রস্তাবনা গুরুত্ব পায় ?

অর্থনৈতিক উদারবাদীরা সাধারণতঃ এমন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দর্শন/ চিন্তাধারা অনুসরণ করেন, যেখানে কম কর আরোপ, সরকারের ব্যয় সংকোচন, সরকারের ঋণভার নুন্যতমকরণ এর মাধ্যমে সংযত রাজস্ব নীতি এবং সুসম বাজেট ব্যবস্থা অবলম্বন , অবাধ বাণিজ্য, অর্থনীতির অপ্রতিবিধান/ নিয়ন্ত্রণহীনতা (deregulation) , বেসরকারিকরণ, শ্রমবাজার নমনীয়তা, এবং ট্রেড ইউনিয়ন এর বিরোধিতা-এসব প্রস্তাবনা / নীতির উপর জোর দেওয়া হয় । ক্লাসিক্যাল উদারবাদ ও রাজস্ব নীতির প্রতি সংযম / রক্ষণশীলতার মনোভাব এর মতোই অর্থনৈতিক উদারবাদ একই দর্শন এর পথ অনুসরণ করে।


৬. অর্থনৈতিক উদারবাদের (উদার চিন্তাধারার) উদ্ভব কিভাবে ?

অর্থনৈতিক উদারবাদের পটভূমি:


জ্ঞানালোকের সময়কালে(during the enlightenment) এবং বণিকবাদ ও সামন্তবাদ বিরোধী ভাবনার কালে অর্থনৈতিক উদারনীতির পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করা হয় । অর্থনৈতিক উদারনীতির প্রথম বিশ্লেষণ করা হয়েছিল অ্যাডাম স্মিথ লিখিত An Inquiry into the Nature and Causes of the Wealth of Nations (1776) গ্রন্থে। বাজার অর্থনীতিতে সরকারের ‘নাক গলানো’ অকাম্য। তাই অর্থনীতিতে সরকারের ন্যূনতম হস্তক্ষেপ এ গ্রন্থে সমর্থন করা হয় ; যদিও মৌলিক গণ-দ্রব্য /সরকারি পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা বিষয়ে সেখানে কোনো অপ্রয়োজনীয় আপত্তি উত্থাপন করা হয়নি ।

স্মিথএর মতে , রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ / কতৃত্ব এর পরিবর্তে যদি সবাইকে নিজ নিজ অর্থনৈতিক জগতে (কর্মকান্ডে) (স্বাধীনতা) দেওয়া হয়, তবে ফলাফল হবে মোহময়। সমাজে দেখা দিবে অধিকতর সাম্য ও সমৃদ্ধি হবে সেখানে ক্রমবর্ধমান। এভাবে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সুদৃঢ় ভিত্তি রচনার সূত্রপাত ঘটে এবং বণিকবাদের অনিবার্য পতন আসন্ন হয় ।


ব্যক্তিগত সম্পত্তি এবং স্বতন্ত্র ব্যক্তিভিত্তিক চুক্তি(individual contracts) হয়ে ওঠে অর্থনৈতিক উদারবাদের গঠনমূলক ভিত্তি। গোড়ার দিকের ব্যক্তি স্বার্থ ও অদৃশ্য হাত(invisible hand) সম্পর্কিত অনুমিতির উপর নির্ভর করে অর্থনৈতিক তত্ত্ব এর যাত্রা শুরু হয়। বাধাহীন অর্থনৈতিক ক্রিয়ার মাধ্যমে (চাহিদা- যোগানের অদৃশ্য বাজার শক্তির দ্বারা) উৎপাদন ও ভোগের কাজ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে পরিচালিত হয়। তবে গণ-তথ্য ও ন্যায়ের ন্যূনতম মান দেশে / সমাজে অন্তত থাকতেই হবে, এটি স্বীকার করা হতো । যেমন, ছিনিয়ে দেয়া /নিগৃহীত করা, চুরি বা জালিয়াতি করা এসব তো নিষিদ্ধ থাকতেই হবে. , যা হলো সরকার বা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আর যা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে তা হলো মত প্রকাশের স্বাধীনতা, তথ্য জানার/সংগ্রহের/বন্টনের স্বাধীনতা, সংবাদপত্র সহ যাবতীয় গণ মাধ্যমের স্বাধীনতা।


প্রাথমিকভাবে, অর্থনৈতিক উদারপন্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছিল ধনী, সম্ভ্রান্ত ঐতিহ্য ও রাজাদের অধিকার এর পক্ষের সমর্থকদের সাথে, যারা সামন্ততান্ত্রিক সুবিধার ছিটেফোঁটা পেতে উদগ্রীব ছিল। সেসব সামন্ততান্ত্রিক সুবিধা প্রাপকরা ধনী, সম্ভ্রান্ত রাজাদের জাতীয় অর্থনীতিকে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থের অনুকূলে চালানোর অধিকারকে সমর্থন করতে থাকে। কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ এবং বিংশ শতাব্দীর শুরু- এই সময়কালের মধ্যে তারা অনেকাংশে পরাজিত হয়। প্রতিষ্ঠা পায় অর্থনৈতিক উদারবাদ(Economic Liberalism)। বর্তমানে ধ্রুপদি উদারবাদ(Classical Liberalism), নব্য উদারনীতিবাদ(Neo-classical Liberalism), ডান-স্বাধীনতাবাদ(Right-libertarianism) এবং রক্ষনশীলতাবাদ (Conservatism) তথা উদার রক্ষনশীলতাবাদ(Liberal Conservatism) এসবের সঙ্গে অর্থনৈতিক উদারবাদ(Economic Liberalism) ধারণা যুক্ত হয়েছে ।


৭. অর্থনৈতিক উদারনীতিতে কিভাবে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের অবস্থা বিচার বিশ্লেষণ করা হয় ?


অর্থনৈতিক উদারনীতি অর্থনীতিতে সরকারী হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে ,কারণ সরকারী হস্তক্ষেপ দ্বারা অদক্ষ ফলাফল দেখা গিয়েছিলো । তবে অর্থনৈতিক উদারনীতি বিদরা আবার ‘শক্তিশালী রাষ্ট্র’ এর ধারণা সমর্থন করতেন , যেখানে রাষ্ট্র সম্পত্তির অধিকার রক্ষা করে এবং চুক্তির প্রয়োগ নিশ্চিত করে । তাঁরা বাজার ব্যর্থতার সমাধানে সরকার এর হস্তক্ষেপকে সমর্থন করেন ।

ধ্রুপদি উদারবাদের উপর ভিত্তি করে Ordoliberalism ও সামাজিক উদারনীতির বিভিন্ন স্কুল মত প্রকাশ করে যে, রাষ্ট্রের ভূমিকা বৃহত্তর, তবে ব্যক্তিগত সংগঠন (এন্টারপ্রাইজ) এবং মুক্ত বাজার এর স্থলে তারা রাষ্ট্রীয় সংগঠন(কর্তৃত্ত্ব) ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকে প্রতিস্থাপন করতে আগ্রহী নন । একটি সামাজিক বাজার অর্থনীতি(social market economy) মূলত মুক্ত বাজার অর্থনীতি, যা অবাধ/ মুক্ত মূল্য ব্যবস্থা ও ব্যক্তিগত সম্পত্তিকে ভিত্তি করে পরিচালিত। কিন্তু বাজার কার্যক্রম থেকে উদ্ভুত সামাজিক অসাম্যের মতো বিষয়গুলো সমাধানের প্রয়াসে প্রতিযোগিতামূলক বাজার বিকাশ ও সমাজ কল্যাণ কর্মসূচি পরিচালনায় সরকারের কাজকর্মের প্রতিও তাঁরা সমর্থন দিয়ে যান।


ইতিহাসবিদ Kathleen G. Donohue যুক্তি দেন যে, ঊনবিংশ শতাব্দীতে যুক্তরাষ্ট্রে ধ্রুপদি উদারবাদের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য, ব্রিটেনের বৈশিষ্ট্যগুলো থেকে ভিন্নরকম ছিল: ইউরোপে ক্লাসিক্যাল উদার তত্ত্বে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছিল ব্যক্তিতাবাদ (idea of laissez-faire)। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে ধ্রুপদি উদারবাদী চিন্তাবিদদের মধ্যে অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, laissez-faire বলতে সরকারের হস্তক্ষেপহীনতা বুঝায় না। বরং যুক্তরাষ্ট্রে ধ্রুপদি উদারবাদী চিন্তাবিদরা মনে করেন সরকারে শুল্ক নীতি প্রয়োগ, রেলপথ ভর্তুকি ও অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন কার্যক্রম আরো বেশি করে পরিচালনা করা উচিত। কারণ এর দ্বারা উৎপাদকরা উপকৃত হয়। তাঁরা বরং ভোক্তাদের পক্ষ নিয়ে সরকার কর্তৃক বাজারে হস্তক্ষেপকে নিন্দা করেন।

(কৃতজ্ঞতাঃ উইকিপেডিয়া)

ধন্যবাদ

মনতোষ চক্রবর্তী।

422 views0 comments

Recent Posts

See All

Comments


bottom of page