top of page
Search
  • Writer's pictureProf Manotosh Chakravarty

Economics of Charles Dickens - chapter 1

চার্লস ডিকেন্স-এর অর্থনীতি

[Economics of Charles Dickens]- ১


- প্রফেসর মনতোষ চক্রবর্তী


অলিভার টুইস্ট এর অর্থনীতি (Economics of Oliver Twist )

শিল্প বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে চার্লস ডিকেন্স এর অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবনা

(Economic and social thinking of Charles Dickens in the context of industrial revolution)


Charles Dickens (1812 - 1870)


চার্লস ডিকেন্স ও অর্থনীতি :

১৮৩৬ থেকে ১৮৬৯ , এ সময়কালের মধ্যে চার্লস ডিকেন্স ১৫ টি উপন্যাস রচনা করেন। তার মাধ্যমে তিনি ‘শিল্প বিপ্লব’ যুগের এক মহান ঔপন্যাসিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। সামাজিক সংস্কারে তিনি ছিলেন অঙ্গীকারাবদ্ধ। নিজস্ব লেখনি শক্তির জোরে তিনি জগদ্বিখ্যাত হয়েছেন। তাঁর বিখ্যাত দুটি উপন্যাস / গল্প এখানে উল্লেখযোগ্য, বিশেষ করে অর্থনীতির শিক্ষার্থীদের জন্য : ‘অলিভার টুইস্ট’ এবং ‘হার্ড টাইমস’। উপন্যাস দুটোতে নগরীর দরিদ্র এবং এবং প্রান্তিক / বিলীনতার প্রান্ত সীমায় অবস্থানরত শিশু এবং বৃদ্ধদের অবস্থা তিনি উপন্যাসগুলোতে বর্ণনা করেছেন।

‘চার্লস ডিকেন্স দারিদ্র্য সম্পর্কে জীবনভর পরিচিত ছিলেন। তাঁর বাবা জেল খেটেছেন ঋণের দায়ে। তিনি শিশু বয়সে মানুষের জুতা পালিশ করেছেন। ট্রেনে শিশু শ্রমিক হিসাবে সেবা দান করেছেন। তবে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও তিনি স্কুলে যেতে পেরেছিলেন, যার বদৌলতে পরে নিউজপেপার রিপোর্টার হিসেবে কাজও পান । তিনি বাস্তবের মুখোমুখি হয়ে দেখেছেন আর্থিক দুর্গতি, কিভাবে মানুষকে নিঃশেষ করে দেয় এবং দারিদ্রের কারণে জীবন কিভাবে বিপথে যায়। ১৮৩৪ সালে ইংল্যান্ডে ‘দা পুওর ল’ প্রণীত হয়। সেই আইন অনুমোদিত হওয়ার পর অলিভার টুইস্ট গল্প বা উপন্যাসটি তিনি রচনা করেন। দরিদ্র আইনে বলা হয়েছিল - যারা কাজ করতে সমর্থ তারা যতদিন পর্যন্ত না কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছে, ততদিন পর্যন্ত কোনো রকম সরকারি অনুদান পাওয়ার যোগ্যতা তারা রাখে না। অলিভার টুইস্ট রচিত হওয়ার পর ঊনবিংশ শতাব্দীর লন্ডনে ‘দা পুওর ল’ তথা দারিদ্র্য সমস্যার প্রতি সামাজিক সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিল।

ইংল্যান্ডে ‘দা পুওর ল’ এর বিধান অনুসারে দরিদ্রদের জন্য রাষ্ট্রীয় অনুদান / সহায়তা সীমিত করায় অনাথ আশ্রমগুলোতে অনটন ও সেই সাথে অনাচার বেড়ে যায়। শিল্প বিপ্লবের ক্রম-সাফল্য ও পুঁজিবাদের বাড়বাড়ন্ত কালে বৈষম্য, দারিদ্র্য, অনাহার - সমাজের অপরাধ প্রবণতাকে পরিপুষ্ট করে। কাজেই শিল্প বিপ্লবের ইতিবাচক দিক থাকলেও নেতিবাচক দিকও তার কম নয়। অলিভার টুইস্ট-এ দেখানো হয়েছে শিল্প বিপ্লবের আবহে অপরাধ জগৎ পরিপুষ্ট হয়ে ওঠে। অপরাধ জগৎ থেকে ইচ্ছে থাকলেও কারো পক্ষে সহজে বের হয়ে আসা সম্ভব ছিল না । আবার একথাও সত্য যে, সমাজের কিঞ্চিৎ উদারতা, ভালোবাসা, স্নেহ , মমতা দ্বারা অপরাধ জগৎ থেকে আলোর জগতে কাউকে কাউকে ফিরিয়ে আনাও সম্ভব। এসবের প্রেক্ষাপটে পুঁজিবাদের ঋণাত্মক / হতাশাজনক দিকগুলো অর্থশাস্ত্র ও নীতিশাস্ত্রের সম্মিলনে কিভাবে কাটিয়ে ওঠা যায় , তারও ইঙ্গিত প্রদান করেছে ডিকেন্সের অলিভার টুইস্ট ও হার্ড টাইমস ।


ডিকেন্সের উপন্যাসের পরিবেশ (পটভূমি )

ডিকেন্স রচিত ফিকশনে ফ্যাক্টরির মালিক এবং শ্রমিকদের মধ্যে সম্পর্ক বর্ণিত হয়েছে। শ্রমিকদের জীবনধারার বর্ণনা তিনি দিয়েছেন। উপন্যাস দুটিতে এমন শহর বর্ণিত হয়েছে - যেখানে লাল - কালো ইট দিয়ে শহরটি মোড়ানো, সেখানে কেবল উড়ে বেড়াচ্ছে ধোঁয়া এবং ছাই। অস্বাভাবিক /অনিয়ন্ত্রিত / ভয়ংকর এ শহর। শহরটিতে আছে শুধু মেশিন আর মেশিন, আর আছে লম্বা লম্বা চিমনি, যেগুলো থেকে ক্রমাগত নির্গত হচ্ছে সর্পিলাকার ধোঁয়া। তা উপরের দিকে উঠছে তো উঠছেই এবং এর যেন কোনো সমাপ্তি নেই। এই শহরের পাশ দিয়ে এগিয়ে গেছে নিকষকালো খাল/ ছোট নদী যেখানে জলের রং হয়ে গেছে কালচে বেগুনি এবং বস্ত্রের বিষাক্ত রং এ তা হয়েছে বিষাক্ত। শহরে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি বিল্ডিং, তাদের জানালাগুলো খোলা থাকলেও নিখোঁজ হাওয়া ও অন্ধকারকে সঙ্গী করে এ শহরের মানুষগুলোর জীবন কাটে । স্টিম ইঞ্জিনের পিস্টন যেভাবে একঘেয়েমিতে কেবলি ওঠানামা করে, যেন পাগলা হাতির মাথার মতো শহরবাসীদের জীবনও দুলতে থাকে একটি সরু তারের ওপর ভর করে।

ডিকেন্সের বেশির ভাগ উপন্যাসে যেমন অলিভার টুইস্ট -লন্ডন নগরী ও তার আশপাশ নিয়ে এবং হার্ড টাইমস- ম্যানচেস্টার নগরীর আবহে চরিত্রগুলোকে জীবন্ত করে তোলা হয়েছে। রাজধানী লন্ডন ও ম্যানচেস্টার এর বেশ কিছু অংশে দরিদ্ররা বসবাস করত এবং সেই গরিব মানুষদের ভিড় থাকতো অলিগলিতে । গলি তস্য গলির অবস্থা ছিল অসহনীয়। গরিব মানুষদের দূর্বিসহ জীবনের চিত্র, নগরীর অলিগলিতে ফুটে ওঠে। গোটা নগরীর অলিগলি ছিল অন্যায় - মারামারি- কাটাকাটিতে ভরা। সেগুলো ছিল বিপদসঙ্কুল, সেখানে গেলে আর সুস্থ / অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসার সম্ভাবনা ছিল ক্ষীণ ।


অলিভার টুইস্ট ও অর্থনীতি (Oliver Twist and Economics )


অলিভার টুইস্ট- কাহিনীর সার সংক্ষেপ:



অলিভার টুইস্ট’- এ একটি অনাথ বালকের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। জন্ম লগ্নেই তার মায়ের মৃত্যু হয়, আর অজানা কারণে জন্মদাতা পিতারও ছিলো না খোঁজ । শৈশব থেকেই অলিভার অনাথ আশ্রমে (এতিমখানায় ) । অনাথ আশ্রম হলো একধরণের শিশু ফার্ম ( baby farm / child farm) , যেখানে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের আনুকূল্যে অথবা সরকারি অনুদানে অতি স্বল্প খাদ্য সরবরাহের মধ্যে বহুসংখ্যক অনাথ বালক বালিকার অপুষ্টির মধ্যে বেঁচে থাকার সংগ্রাম পরিচালিত হয় ।]

দারিদ্র ও দূর্ভাগ্য এ দুটোকে সঙ্গী করে জন্মেছিলো অলিভার টুইস্ট। বেড়ে উঠেছে কল্পিত শহর Mudfog এর একটি workhouse এ, যা লন্ডন থেকে ৭০ মাইল দূরে অবস্থিত বলে উল্লেখ করা হয়. তার জন্মদাত্রী মায়ের নাম হলো Agne, যে অলিভারকে জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায়. Agne র নামাঙ্কিত স্বর্ণের লকেটটি ওয়ার্কহাউস এর কেউ দখলে নিয়ে নেয়, তবে মাতৃহারা শিশু অলিভার স্থান পায় সেখানে। মিসেস Mann র তত্ত্বাবধানে পরিচালিত শিশু ফার্মে ( বেবি ফার্ম / চাইল্ড ফার্ম) অলিভার জীবনের প্রথম নয়টি বছর কাটায়। স্বল্প খাবার খেয়ে ও অযত্নে অলিভার বড় হতে থাকে। অলিভারের নবম জন্মদিনে গির্জার কর্মকর্তা Bumble -র নির্দেশ অনুযায়ী বেবি ফার্ম থেকে workhouse এর প্রধান কার্যালয়ে কাজ করার জন্য তাকে পাঠানো হয়। কিন্তু অতি সামান্য খাবার খেয়ে অলিভার কষ্টে মাস ছয়েক সেই workhouse এ কাটায়। একদিন workhouse র অর্ধভুক্ত ছেলেরা সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষের কাছে তারা বাড়তি খাদ্যের জন্য দাবি জানাবে, দাবি পেশ করার দায়িত্ব অর্পিত হয় অলিভারের ওপর। অলিভার Bumble -র কাছে বিনীতভাবে জাউ-ভাতের পরিমাণ বাড়ানোর অনুরোধ করে। এতে workhouse-র কর্মকর্তাদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। অলিভারের বাড়তি খাবার চাওয়াকে তারা ঔদ্ধত্য বলে মনে করে। তাকে আর সেখানে রাখা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় । এমন কি প্রয়োজনে যে ব্যক্তি তাকে নেবে, তাকে উল্টো পাঁচ পাউন্ড অর্থও দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। এক ভয়ালদর্শী চিমনি সাফাইকারী তাকে নেবে বলে এগিয়ে আসে কিন্তু অলিভার সেই নিষ্ঠুর ব্যক্তির কাছে তাকে যেন তুলে না দেয়া হয়, এর জন্য কান্নাকাটি করতে থাকে। তার প্রবল আপত্তি দেখে দয়ালু ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয় সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করেন। তখন Mr Sowerberry নামে এক ব্যক্তি এগিয়ে আসে অলিভারকে তার কাজে নেওয়ার জন্য। তবে Mr Sowerberry’ র বিবাহিত জীবন মধুর ছিলো না। Sowerberry’ র স্ত্রী অলিভারের প্রতি রূঢ় আচরণ করতো। অন্যান্য এপ্রেন্টিস বালকদের সাথেও অলিভারের কখনো কখনো কথা কাটাকাটি হতো. আর Sowerberry’ র স্ত্রী অলিভারের দোষই সর্বদাই খুঁজে বেড়াতো। অলিভারকে অপদস্থ করার জন্য একদিন Noah নামে এক বয়স্ক বালক, অলিভারের জন্মদাত্রী মার নামে নানা গালি গালাজ করে। তাতে অলিভার ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারতে উদ্যত হয়। Sowerberry’ র স্ত্রী Noah এর পক্ষ অবলম্বন করে এবং অলিভারকে মারধর করে। তাতেও তারা ক্ষান্ত হয় নি, পরে মালিক Sowerberry ও Mr Bumble এর কাছেও তারা অভিযোগ উত্থাপন করে। তারাও অলিভারকে আরো শাস্তি দেয়। এতে অলিভার খুবই মনোকষ্ট পায় ও নিভৃতে কান্নাকাটি করে । রাত পোহালেই অলিভার ভালো জীবনের প্রত্যাশায় লন্ডনের উদ্দেশ্যে Sowerberry’র ঘর থেকে পালিয়ে যায়। কপর্দকশূন্য অলিভার লন্ডনের পথে একা একা ঘুরতে ঘুরতে শেষ পর্যন্ত পকেটমারদের গ্রুপের একটি বালকের সাথে তার সাক্ষাৎ ঘটে। খাওয়া থাকা ফ্রি, এ আশ্বাসে সে অলিভারকে নিয়ে যায় তাদের গ্রুপ লিডার Fagin ‘র কাছে। প্রথমে অলিভার বুঝতে পারেনি যে, সে অপরাধ চক্র এর খপ্পরে পড়েছে। পরে সে আরো বুঝতে পারে যে , অপরাধ চক্র তার কোনো সদস্যকে সেই চক্র ত্যাগ করতেও দেয় না ।


প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পকেটমার ছেলেগুলোর সাথে যখন অলিভার একদিন বাইরে ঘোরাফেরা করছে, তখন সে দেখে কিভাবে পকেটমার ছেলেগুলোর একজন, এক বয়স্ক ভদ্রলোক( নাম তার মিস্টার ব্রাউন লো) এর পকেট থেকে আলগোছে একটি রুমাল তুলে নিলো। ধরা পড়ার ভয়ে অপরাধ না করলেও অলিভার দিশেহারা হয়ে দৌড়াতে শুরু করলো। তার দিশেহারা আচরণ দেখে সেই ভদ্রলোক ধারণা করলেন অলিভারই দোষী। তাকে অ্যারেস্ট করা হলো। অবশ্য পরবর্তীতে নানা জেরার মাধ্যমে মিস্টার ব্রাউন লো বুঝতে পারলেন যে, ভুল হয়ে গেছে, আসল অপরাধীকে ধরা যায়নি। তখন তিনি ছেলেটির দায়িত্বভার নিয়ে নিজ বাড়িতে অলিভারের থাকার ব্যবস্থা করলেন। অলিভারও পকেটমারদের গ্রুপের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে পেরেছে বলে স্বস্তি বোধ করে। মিস্টার ব্রাউন লো এর সাথে সাক্ষাৎ হওয়ার পর অলিভার জীবনের ভালো দিকের কথা জানতে পারে। তার মধ্যে ভালো হয়ে ওঠার ইচ্ছা জাগ্রত হয়। কিন্তু অপরাধীদের সংস্রব কাটিয়ে ওঠা সহজ নয় , অপরাধ চক্র কখনো তার কোন সদস্যকে সেই চক্র ত্যাগ করতে দেয় না। কারণ পুলিশের কাছে তাদের পরিচয় ফাঁস হয়ে যেতে পারে, এ আশংকা তাদের মধ্যে সবসময় থাকে। কাজেই পকেটমারদের গ্রুপ নাছোড়বান্দা হয়ে খুঁজে ফিরতে লাগলো কিভাবে অলিভার কে দলে ফিরিয়ে আনা যায়। পকেটমারদের দলে একটি যুবতী মেয়ে ছিল, তার নাম Nancy । অলিভারকে কৌশলে ধরে আনার জন্য Nancy এবং Fagin ‘ র আরেকজন অনুচর ডাকাত Bill Sikes, এ দুজন কৌশলে অলিভার কে ফিরিয়ে আনে । তবে অলিভারের প্রতি Nancy’র কিছুটা স্নেহ / সহানুভূতি থাকায় Fagin ‘ র মারধর থেকে অলিভার সে যাত্রায় বেঁচে যায়। এরপর ন্যান্সির আপত্তি সত্বেও Fagin অলিভারকে একটি ডাকাতির মিশনে টিমে অন্তর্ভুক্ত করে লন্ডনের নিকটবর্তী একটি অঞ্চলে পাঠায়। অলিভারকে নিরুপায় হয়ে ডাকাত দলের সাথে যেতে হয়। যে বাড়িতে ডাকাতি করা হবে, তার একটি জানালা দিয়ে অলিভারকে ভিতরে প্রবেশ করতে বলা হয়, যাতে সে ভিতরে ঢুকে সদর দরজাটি ডাকাতদের জন্য খুলে দিতে পারে। সেই প্রস্তাবে অলিভার আপত্তি জানালে Sikes তাকে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। অগত্যা অলিভার বাড়ির ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করে এবং তখন বাড়ির বাসিন্দাদের ছোড়া গুলি এসে অলিভারের হাতে লাগে। অলিভারকে বাড়ির বাসিন্দারা ডাকাতির অভিযোগে আটকও করে। তবে সেই বাড়ির দয়াশীল কর্ত্রী Mrs Maylie অলিভারের শুশ্রূষার দায়িত্বও পালন করেন।


ডাকাতির ব্যর্থতার পর Fagin ‘র পরিচিতরা Faginকে নানাভাবে অভিযুক্ত করে। Fagin কেন অলিভারকে প্রকৃত ক্রিমিনাল হিসাবে গড়ে তুলতে পারলো না, এ অভিযোগ উত্থাপন করে Monks নামে এক দুর্বোধ্য চরিত্রের মানুষ। Monks তার স্বীয় স্বার্থে অলিভারকে ক্রিমিনালে রূপে সমাজের কাছে প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট থাকে। অলিভারকে নিয়ে Monks ও Fagin’র ষড়যন্ত্র Nancy’র গোচরীভূত হয়। অলিভারকে মিস্টার ব্রাউন লো এর নিকট থেকে Fagin ‘ র কাছে ফিরিয়ে এনে Nancy নিজেকে নিজে অপরাধী মনে করছিলো এবং অলিভারের যাতে আর বেশি না ক্ষতি হয়, তার জন্য সদা সে সতর্ক থাকতো। নিজের বোধ থেকেই Nancy যাতায়াত বাড়িয়ে দিলো Mrs Maylie ‘র কাছে, যেখানে ছিল অলিভারের অবস্থান। এদিকে Fagin ন্যান্সির বিরুদ্ধে Sikes এর কাছে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তুলে এবং নানাভাবে Sikes এর মন বিষিয়ে তোলে। Sikes একদিন ন্যান্সিকে খুন করে ও পালিয়ে বাঁচতে গিয়ে নিজেও মৃত্যু বরন করে।


অলিভার তার নিজ অতীত যেন জানতে না পারে Monks সে বিষয়ে সর্বদা চেষ্টা করে। প্রকৃত অবস্থায় Monks ও অলিভার ছিল সম্পর্কে একজন আরেক জনের সৎ ভাই। Monks তা জানতো, কিন্তু অলিভারের তা ছিল অজানা। Mr Brownlo ঘটনাক্রমে Monks এর নিকট থেকে তার ও অলিভারের জীবন কাহিনী জানতে পারে। Monks এর পিতা Edwin, Monks এর মায়ের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটায় এবং অলিভারের মা Agne ‘র সাথে Edwin ভালোবাসার সম্পর্কে আবদ্ধ হয়। কিন্তু সেই বিপথ ভালোবাসার পাত্রী Agne ‘কে লন্ডনে ফেলে রেখে Edwin দুর্ভাগ্যজনকভাবে রোমে মারা যান। Edwin ‘ র সম্পত্তির উত্তরাধিকারি রূপে অলিভার যাতে Monks এর প্রতিদ্বন্দ্বী হতে না পারে, এ বিষয়ে Monks যারপর নাই চেষ্টা করতে থাকে। Mr Brownlo সবকিছু অবহিত হয়ে Agne ‘র একটি ফটো সংগ্রহ করে অলিভারের সাথে চেহারার মিল খুঁজে পান। বিভিন্ন তথ্য মিলিয়ে অলিভার ও Monks এর সম্পর্ক বিষয়ে তিনি নিশ্চিত হন। Edwin ‘র সম্পত্তির মালিকানা অলিভার ও Monks এর মধ্যে ভাগও করে দেন। কিন্তু Monks শেষ পর্যন্ত পাপচক্রেই ডুবে থাকে ও মৃত্যুবরণ করে। এদিকে অলিভারকে Mr Brownlo দত্তক পুত্র হিসাবে গ্রহণ করেন। আরো জানা যায় যে Mrs Maylie ছিলেন অলিভারের মা Agne ‘র বোন, কাজেই Mrs Maylie অলিভারের মাসি হিসাবে স্বীকৃতি পেলেন। আর অলিভারও তার দত্তক পিতা ও মাসির সাহচর্যে সুখে দিনাতিপাত করার সুযোগ পেল। এ হলো সংক্ষেপে অলিভার টুইস্ট এর কাহিনী। ]



অলিভার টুইস্ট- শিল্পপ্রধান সমাজব্যবস্থার প্রকৃতি ও তার প্রভাব বিশ্লেষণে নানাবিধ চরিত্র চিত্রণ:

অলিভার টুইস্টে ডিকেন্স 19th শতাব্দীর ইংল্যান্ড এ শিল্পপ্রধান সমাজব্যবস্থার প্রভাব বর্ণনা করতে গিয়ে নতুন কঠোর দারিদ্র আইন এর সমালোচনা ও নির্দয় বিদ্রুপতার সঙ্গে নির্মম বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরেছেন। অলিভার, একজন নিষ্পাপ শিশু, যে এমন এক পাপ জগতে আটকা পড়েছিল যেটি তার কাছে একমাত্র বিকল্প কর্মক্ষেত্র মনে হয়েছিল। অপরাধের জীবন, যা ফাগিনের গ্যাং, যেন একটি জেলখানা। তা একটি মৌলিক সমাধির প্রতীক । অপ্রতিরোধ্য শিল্প / প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো থেকে যেন একটি রূপকথার উত্থান ঘটে। দুর্নীতি ও অবক্ষয়ের মাঝেও মূলত প্যাসিভ অলিভার খাঁটি হৃদয়ের থেকে যায়; আশেপাশের লোকেরা যখন দুর্নীতি ও অবক্ষয়ে নিমজ্জিত থাকে , মন্দ থেকে মন্দতর অবস্থায় সরে যেতে থাকে , তখন যথার্থ রূপকথার ফ্যাশনে শেষ পর্যন্ত অলিভার তার পুরষ্কারটি পেয়ে যান - সেটি হলো বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয় পরিজন সম্মিলনে নিজ দেশে শান্তিময় জীবনযাপনের সুযোগ । অলিভার টুইস্ট গল্পের এই সুখী সমাপ্তির পথে ডিকেন্স এক প্রকার বিস্মৃত জীবনের ধরণ অন্বেষণ করেছেন, যেখানে একটি অনাথ ছেলে 1830 এর লন্ডনে নেতৃত্বের প্রত্যাশা করতে পারে।

দারিদ্র্য একটি প্রধান উদ্বেগ, যা অলিভার টুইস্টের পুরো উপন্যাস জুড়ে এই থিমটি প্রসারিত হয়েছিল। সেখানে বস্তিগুলি এতটাই প্রসারিত হচ্ছিলো যে, তার দ্বারা ডিকেন্স এর মনে হয়েছিল পুরো লন্ডনের সারি সারি ঘরগুলি যেন ধ্বংসের দিকে চলেছে। অলিভার যখন মিঃ সোভারবেরি এর সাথে এক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেন এবং পুরো পরিবারকে একটি কক্ষে একসাথে ভিড় করে বসবাস করতে দেখেন, তখন ডিকেন্সের সামনে শিল্প বিপ্লবের আরেক পিঠে প্রচলিত দুর্দশা ও দাতব্যতা মুখোমুখি হয়ে ওঠে ।

ডিকেন্স তার মধ্যবিত্ত পাঠকদের জানিয়েছেন দারিদ্র্য, অনাহার, প্লেগ কিভাবে লন্ডনের জনসংখ্যাকে পর্যুদস্ত করেছিল। অলিভার টুইস্টে তিনি সামাজিক বর্ণ এবং সামাজিক অবিচার সম্পর্কে মিশ্র বার্তা দেন। অলিভার দেখেছে কিভাবে ওয়ার্কহাউস অবৈধ কাজে লিপ্ত ছিল, শিশু খাদ্য চুরি, শিশুদের দাবিয়ে রাখা, বন্ধুহীন এতিম হিসাবে নিয়মিত তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা, এসব ছিল ওয়ার্কহাউস এর নিত্য চিত্র। কিন্তু তার চারিত্রিক দৃঢ়তা তাকে বাঁচিয়ে রাখে। তাঁর বেশিরভাগ সহযোগীর আস্থানা হলো সমাজের পাপ গর্তগুলো, এ যেন তাদের প্রাপ্যই ছিল ।

এ উপন্যাসে চরিত্রগুলোর মধ্যে লক্ষ্য করা যায় - অলিভারের মতো দয়ালু মনোবিকতাসম্পন্ন ছেলেকে , নোহ ছিল নিখুঁত, বোকা এবং কাপুরুষ; সাইকস ছিল একটি ঠগ; ফাগিন এক অত্যাচারীর প্রতিমূর্তি, যে বাচ্চাদেরকে দুর্নীতিতে উদ্বুদ্ধ করে নিজে বেঁচে থাকে এবং আর্টফুল ডজার যেন অপরাধের জন্যই জন্মগ্রহণ করে । মধ্যবিত্ত চরিত্র যাদের সাথে অলিভার মুখোমুখি হয়েছে — মিসেস সোভারবেরি, মিস্টার বাম্বল এবং ওয়ার্কহাউস বোর্ডের ভন্ড "ভদ্রলোক"।

ওয়ার্কহাউস এর ছেলেদের পক্ষে খাদ্যের দাবি জানায় অলিভার, এ থেকে তার কোমল মনের পরিচয় পাওয়া যায় । যদিও সারাজীবন তাকে নির্যাতন ও অবহেলা করা হয়েছে, তবুও সে অন্য কাউকে ভুক্তভোগী করার চিন্তা কখনো তার মনে ঠাঁই দেয়নি।

ভাল জিনিসের জন্য জন্মগ্রহণকারী অলিভারকে অবশেষে তার পরিবার উদ্ধার করে তাকে উপযুক্ত জায়গায় ফিরিয়ে আনে - তবে সেখানে ফিরে আসার আগে আন্ডার ক্লাসের বর্বর জগতে টিকে থাকার জন্য সে প্রচন্ড লড়াই চালিয়ে যায় ।

ডিকেন্স প্রতীক যথেষ্ট ব্যবহার করেন । উদাহরণস্বরূপ, "আনন্দিত প্রবীণ ভদ্রলোক" হিসাবে ফাগিনের শয়তানী বৈশিষ্ট্য উপন্যাসে ফুটে ওঠে। তিনি অপরাধ- বিশ্বের নিজস্ব কোণে সভাপতিত্ব করেন। তরুণ ছেলেদেরকে দুর্নীতিতে নামায় একজন অভিজ্ঞ দুর্নীতিবাজ। তিনি ছিলেন এমন একজন পাপে আকণ্ঠ নিমজ্জিত এমন এক অপরাধী যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগের রাতেও প্রার্থনা করতে অস্বীকার করেছিলেন।

লন্ডন বস্তিতেও দমবন্ধ, নারকীয় দিক রয়েছে। অন্ধকার কাজ এবং অন্ধকার আবেগগুলোকে সারি সারি ম্লান কক্ষ এবং পিচ-কালো রাস্তা ও রাতের আঁধার দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। অন্যদিকে সন্ত্রাস ও বর্বরতার মেজাজকে অস্বাভাবিক ঠান্ডা আবহাওয়ার দ্বারা চিহ্নিত হয় ।

উপন্যাসটিতে উঁচু সামাজিক শ্রেণীর দ্বারা অলিভারের জগতের প্রতি অবিচারের দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয় । অর্ধ -ভুক্ত শিশুটি যখন আরও চাওয়ার সাহস করে, তখন তাকে শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি সেই অবিচারকে তথাকথিত উঁচু সমাজের সামনে মুখ ব্যাদান করে দেখিয়ে দিয়েছে।

উপন্যাসের শেষের দিকে, কথিত চোখের দৃষ্টিগুলি একটি শক্তিশালী প্রতীক হয়ে ওঠে। বছরের পর বছর ধরে, ফাগিন দিনের আলো, ভিড় এবং খোলা জায়গাগুলি এড়িয়ে যায় এবং বেশিরভাগ সময় নিজেকে অন্ধকারে লুকিয়ে রাখে। যখন তার ভাগ্য তাকে শেষপ্রান্তে টেনে নিয়ে যায়, তখন সে অনেকগুলি চোখের "জীবন্ত আলো" তে ডুবে যায়। একইভাবে, সিকস ভোরবেলা ন্যান্সিকে হত্যা করার পরে, ঘরের উজ্জ্বল সূর্যের আলো ফেলে গ্রামাঞ্চলে চলে গিয়েছিল, কিন্তু ‘মৃত’ চোখের স্মৃতি থেকে সে নিজেকে বাঁচাতে পারেনি ।

কুকুরের কার্যকলাপ, সাইকসের আচরণে পশুর বর্বরতার প্রতিনিধিত্ব করে । সাইকস নিজেই অনুভব করেছেন কুকুরটি যেন তার নিজেরই প্রতিচ্ছবি। সে কারণেই সে কুকুরটিকে ডুবিয়ে মারার চেষ্টা করে।

মিঃ ব্রাউনলো এবং ফাগিন হলো "ভাল বনাম অশুভ" এর প্রতিচ্ছবি । ডিকেন্স অলিভারসহ সৎ, আইন-শৃঙ্খলা মান্যকারী কতিপয় চরিত্রকে যেমন জুড়ে দেন , আবার আর্টফুল ডজারের মতো চরিত্র তিনি বিবেচনা করেন, যারা আইন অমান্য করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। অপরাধ ও শাস্তি - এ জুটির সাথে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ জুটি হলো পাপ এবং মুক্তি।

ডিকেন্স পকেটমারা থেকে শুরু করে খুন পর্যন্ত অপরাধমূলক কাজগুলি বর্ণনা করে দেখিয়েছেন পাপ চরিত্রগুলি শেষ পর্যন্ত কঠোর শাস্তি পেয়েছে । স্পষ্টতই, তিনি দেখান যে, বিল সাইকসকে তার বর্বর কাজের জন্য জনতার হাতে মরতে হয়েছিল এবং ফাগিনকে নিন্দিত সেলে প্রেরণ করা হয়েছিল এবং যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হয়েছিল। বিপরীতে, ন্যান্সি তার নিজের জীবনের মূল্য দিয়ে অপরাধ জীবন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা করে এবং প্রার্থনা করতে করতে সে মারা যায়। যদিও ন্যান্সি শৈশব থেকেই ফাগিনের দ্বারা পরিপূর্ণ, অপরাধী এবং প্রশিক্ষিত, কিন্তু অলিভারকে অপহরণে তার ভূমিকার বিষয়ে সে অনুতপ্ত এবং প্রায়শ্চিত্ত করতে সচেষ্ট ।

দুর্নীতিগ্রস্থ হলেও সবাই এখনও যে নৈতিকভাবে মৃত নয়, এটি ন্যান্সির চরিত্রে ফুটে উঠেছে । "চুরির, রাস্তায় চাবুক দেওয়া" চরিত্রের এমন এক অনর্থক বিপর্যয় দেখানোর জন্য ডিকেন্স এর সমালোচনা করা হয়েছিল। তখন ডিকেন্স ন্যান্সির অন্তরের পরিবর্তনকে "শুকনো-ভূমিতে জলের শেষ ফোঁটা" বলে অভিহিত করেন।



অলিভার টুইস্ট - নীতিকথা:

(১)দারিদ্র্য মানুষকে অপরাধ জগতে ঠেলে দেয় এবং অপরাধ-অক্টোপাসের বাঁধন ছিন্ন করা বড়োই কঠিন । [উনবিংশ শতকের লন্ডনে অনাথ বালক অলিভার টুইস্ট কিভাবে অপরাধ জগত প্রবেশ করে এবং কিভাবে তার জীবন দারিদ্র্য ও অপরাধ বৃত্তে ঘুরপাক খেতে থাকে, এ বিষয়টি গল্প/ উপন্যাসে প্রতিফলিত হয়েছে।]


(২) ভালো ও মন্দ এই দুয়ের মধ্যে সংঘাত সর্বদাই বিদ্যমান, তবে নানা দুর্বিপাকেও ভালো বা সত্য কখনো পরাভূত হয় না।

(৩) প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, সহমর্মিতা, সাহসিকতা, সহযোগিতা, সততা, কৃতজ্ঞতা, দয়া এগুলোর সামাজিক মূল্যতো আছেই, তার অর্থনৈতিক মূল্যও কিন্তু কম নয়।(এ বিষয়ে Owen এর আদর্শ শিল্প কারখানা বিষয়ক লিখাটি পরবর্তীতে প্রকাশ পাবে, সেটি দেখার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি)

(৪) দারিদ্র্যের কারণে সাময়িক বিপর্যস্ততা / বিপথগামিতা ঘটলেও সামাজিক মৌল নীতি আদর্শগুলোর প্রভাবে দরিদ্র মানুষও আদর্শ মানুষ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারে।


এরপর দেখার অনুরোধ রইলো -


চার্লস ডিকেন্স-এর অর্থনীতি

[Economics of Charles Dickens]- ২


হার্ড টাইমস এর অর্থনীতি (Economics of Hard Times )


কৃতজ্ঞতা: উইকিপেডিয়া


ধন্যবাদ অন্তে - প্রফেসর মনতোষ চক্রবর্তী







57 views0 comments

Recent Posts

See All

Comments


bottom of page