প্রশ্ন- ১১.(খ) চাহিদা ও যােগানের পারস্পরিক প্রভাবে কিভাবে বাজার ভারসাম্য নির্ধারিত হয়, তা রেখাচিত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা কর।(How market equilibrium is determined by the interacting effects of demand and supply? Explain diagrammatically.)
-প্রফেসর মনতোষ চক্রবর্তী
বাজার ভারসাম্য হল বাজারের সেই পরিস্থিতি, যেখানে বাজারে বিবেচ্য দ্রব্য বা সেবার কোনরূপ ঘাটতি বা উদ্বৃত্ত থাকে না। যে দামে চাহিদার পরিমাণ ও যােগানের পরিমাণ সমান হওয়ার মাধ্যমে বাজার ভারসাম্য অর্জিত হয়, সেই দামকে ভারসাম্য দাম(equilibrium price) বা বাজার সাফ দাম (market clearing price) বলে। আবার এভাবেও বলা যায় - বাজারে যে পরিমাণ দ্রব্য বা সেবার ক্ষেত্রে চাহিদা-দাম (অর্থাৎ যে দাম ক্রেতা প্রদান করতে প্রস্তুত) এবং যোগান-দাম( যে দামে বিক্রেতা বিক্রয় করতে প্রস্তুত/ অর্থাৎ বিক্রেতা কর্তৃক প্রত্যাশিত দাম) সমান , সেই পরিমাণ দ্রব্য বা সেবাকে ভারসাম্য পরিমাণ(equilibrium quantity) বলে।
চিত্রে চাহিদা রেখা DD এবং যােগান রেখা ss। চাহিদা রেখা ডানদিকে নিম্নগামী। আর যােগান রেখা ঊর্ধ্বগামী। চাহিদার পিছনে ক্রেতার শক্তি এবং যােগানের পিছনে বিক্রেতার শক্তি কাজ করে । E বিন্দুতে DD ও SS রেখা পরস্পর ছেদ করে। ক্রেতার শক্তি ও বিক্রেতার শক্তি -এ’ দু’য়ের সমতার দ্বারা E বিন্দুতে বাজার ভারসাম্য অর্জিত হয়। E হল ভারসাম্য বিন্দু(equilibrium point)। সেখানে ভারসাম্য দাম নির্ধারিত হয় OPo এবং ভারসাম্য পরিমাণ নির্ধারিত হয় OQ০।
Po দামে D = S অর্থাৎ চাহিদা ও যোগান উভয় পরিমাণই PoE। এ দামে অবিক্রীত দ্রব্য বাজারে পড়ে থাকে না। Po এর চেয়ে কম দামে বাজারে ঘাটতি (অতিরিক্ত চাহিদা) এবং Po এর চেয়ে বেশি দামে বাজারে উদ্বৃত্ত (অতিরিক্ত যােগান, যাকে ঋণাত্মক অতিরিক্ত চাহিদাও বলা যায়) থাকে। Po দামে অতিরিক্ত চাহিদা বা যােগান থাকে না। যেমন P1 দামে বিক্রেতা P1N1 বিক্রয় করতে চায়, কিন্তু P1 দামে ক্রেতা P1M1 ক্রয় করতে চায়। সুতরাং বাজারে দ্রব্য বা সেবা যোগানের অংশ অবিক্রীত বা উদ্বৃত্ত থেকে যায়। যা হলো M1N1= P1N1 - P1M1। কাজেই S > D হওয়ায় বাজারে সেই উদ্বৃত্ত দেখা দেয়। তখন বিক্রেতাদের মধ্যে প্রতিযােগিতার কারণে দাম P1 থেকে Po তে নেমে আসে। অপরদিকে P2 দামে বিক্রেতা P2N2 বিক্রয় করতে আগ্রহী, কিন্তু P2 দামে ক্রেতা P2M2 ক্রয় করতে চায়। তখন যোগানের তুলনায় চাহিদার পরিমাণ বেশি হওয়ায় বাজারে ঘাটতি দেখা দিবে , তা হবে N2M2 = P2M2 - P2N2 = N2M2. কাজেই S<D হওয়ায় বাজারে এ ঘাটতি দেখা দেয়। এ অবস্থায় ক্রেতাদের মধ্যে প্রতিযােগিতার কারণে বাজারে দাম বেড়ে যায়। P2 থেকে দাম বেড়ে Po এর দিকে যেতে থাকে।
কাজেই চাহিদা ও যোগানের পারস্পরিক প্রভাবে P1 বা P2 দাম থেকে Po দামে ফিরে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। তাই বলা যায় Po দামে চাহিদা ও যােগানের সমতার দ্বারা বাজার ভারসাম্য অর্জিত হয় এবং সেই ভারসাম্য স্থিতি লাভ করে।
-প্রফেসর মনতোষ চক্রবর্তী
Email: manotosh.chakravarty@gmail.com
Comments