বণিকবাদ(মার্কেন্টালিজম)
[Mercantilism]
পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে শুরু করে অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত ইউরােপীয় রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক মতাদর্শের সমন্বিত রূপকে ‘বণিকবাদ বা মার্কেন্টালিজম্' বলে। এই মতবাদে বলা হয়, একটি জাতির সম্পদ বৃদ্ধির পেছনে বাণিজ্যের ভূমিকাই মূখ্য। বাণিজ্য যত বৃদ্ধি পাবে, ততই সম্পদেরও বৃদ্ধি ঘটবে। মার্কেন্টালিজমকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। যেমন- বুলিওনিজম্, কোলবার্টিজম্, ক্যামেরালিজম্।
বণিকবাদের প্রথমদিকের চিন্তাবিদগণ বিশ্বাস করতেন, একটি জাতি তখনই সম্পদশালী বলে গণ্য হবে, যখন সে স্বর্ণ ও রৌপ্যের ন্যায়(বুলিওন) মূল্যবান ধাতব পদার্থের অধিকারী হয় । কাজেই, তাঁরা স্বর্ণ ও রৌপ্য সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন পন্থার নির্দেশ দেন। সেই পন্থাগুলাের মধ্যে অন্যতম হলাে বাণিজ্য। এ কারণে মার্কেন্টালিজমকে বুলিওনিজম বলে।
জার্মানীতে মার্কেন্টালিজমকে ক্যামেরালিজম বলে। ক্যামেরালিজম বলতে রাজ পরিবারের অর্থনীতিকে বুঝানাে হয়। রাজকোষে ধন-সম্পদ বৃদ্ধি, তা' রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত নীতি বা মতবাদকে ক্যামেরালিজম বলা হয় ।
ফ্রান্সে মার্কেন্টালিজম-কে কোলবার্টিজম বলা হয় । প্রায় তিনশ’ বছর ধরে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, জার্মানী, ইটালী এবং স্পেনসহ ইউরােপের প্রায় প্রত্যেক দেশেই মার্কেন্টালিজম্ (বণিকবাদ) মতবাদ বহাল থাকে। তৎকালে রাশিয়াতেও এ মতবাদ অনুসরণ করা হতাে।
টমাস মুন- Thomas Mun(1571-1641)
টমাস মুন একজন ইংরেজ, বণিকবাদের প্রতিনিধিত্বকারী। তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীতে চাকুরি করতেন। তাঁর গ্রন্থটির নাম "England's Treasure by Foreign Trade". গ্রন্থটি 1620-1630 সময়কালে লিখা হলেও তাঁর পুত্র John কর্তৃক 1664 সালে তা প্রকাশ পেয়েছিল। সেই গ্রন্থে তিনি বণিকবাদের মূলনীতিগুলােকে সুশৃঙ্খলভাবে সবার সামনে তুলে ধরেন। তাই বণিকবাদের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে টমাস মুন স্বীকৃতি পান। তিনি বাণিজ্য ভারসাম্যের উপর গুরুত্ব দেন। তাঁর মতে, “আমাদের সম্পদ ও ধনরত্ন বাড়াতে হলে সাধারণ উপায় হলাে- বৈদেশিক বাণিজ্য, যেখানে অবশ্যই এই নীতিটি অনুসরণ করতে হবে যে, বছরে বিদেশীদের কাছে অধিক বিক্রয় করতে হবে এবং বিনিময়ে বিদেশীদের কাছ থেকে মূল্যের প্রেক্ষিতে কম দ্রব্য ভােগ(ক্রয়) করতে হবে।”
টমাস মুন শিল্পক্ষেত্রকে প্রাধান্য দেন এবং বিলাস ও আলস্যকে নিন্দা করেন। মুদ্রাকে তিনি একটি বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে কেবল বিবেচনা করেন।
এন্টনিও সেরা(Antonio Serra )
[১৫৮০-১৬৫০, তবে জন্ম ও মৃত্যু সাল নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি আছে]
টমাস মুন ছাড়াও বণিকবাদের অন্যতম একজন প্রতিনিধি হিসাবে এন্টনিও সেরা স্বীকৃতি পান। তিনি একজন ইটালিয় দার্শনিক ও অর্থনীতিবিদ । তিনি একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেছিলেন , তার শিরোনাম হলােঃ "A Brief Treatise on the causes which can make gold and silver abound in kingdoms where there are no mines". এই পুস্তিকায় বণিকবাদ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। পৃথিবীর কোনো কোনো দেশ স্বর্ণ ও রৌপ্য খনিতে সমৃদ্ধ, আবার অনেক দেশ আছে, যাদের সে ধরণের খনি নেই, কিন্তু স্বর্ণ ও রৌপ্য অর্জনের সুযােগ তাদেরও আছে। এন্টনিও সেরার মতে শিল্প ক্ষেত্রের প্রসার, জনসংখ্যার গুণগত বিকাশ, সম্প্রসারিত বাণিজ্যিক কার্যক্রম এবং রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের মধ্যমে তা অর্জন করা সম্ভব ।
কৃতজ্ঞতাঃ Wikipedia
ধন্যবাদ।
- মনতোষ চক্রবর্তী
Comentários