প্রশ্ন ১৬। (ক),2019 আর্থিক নীতি বলতে কি বুঝ ?(What do you understand by monetary policy ?)
আর্থিক নীতি (মুদ্রানীতি)
যে নীতির মাধ্যমে দেশের অর্থ কর্তপক্ষ অর্থের যােগান নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে আর্থিক নীতি বা মুদ্রানীতি বলে । দেশের অর্থ কর্তৃপক্ষ বলতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমন্বিত ব্যবস্থাকে বুঝানাে হয়। অর্থের যােগান এর মধ্যে মুদ্রা, চাহিদা আমানত/ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলাের প্রদত্ত ঋণ, এসব অন্তর্ভুক্ত থাকে । কাজেই ‘শক্তিশালী মুদ্রা’- যোগানের নীতি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘ঋণ নিয়ন্ত্রণ’ নীতি - এদের সমন্বিত নীতিই হলো আর্থিক নীতি। আর্থিক নীতির উল্লেখিত সংজ্ঞাটিকে কেউ কেউ সংকীর্ণ সংজ্ঞা হিসাবে অভিহিত করেন । অধ্যাপক পল এইনজিগ (Paul Einzig) আর্থিক নীতির একটি প্রসারিত সংজ্ঞা প্রদান করেন। তাঁর মতে, “আর্থিক ও অনার্থিক লক্ষ্যে পরিচালিত সব রকমের সিদ্ধান্ত এবং গৃহীত পদক্ষেপ, যাদের দ্বারা দেশের অর্থব্যবস্থা প্রভাবিত হয়, এসবের সমন্বিত রূপায়ণকে আর্থিক নীতি বা মুদ্রানীতি বলে।”
প্রশ্ন ১৬।(খ), 2019
আর্থিক নীতির হাতিয়ারসমূহ আলােচনা কর । (Discuss the instruments of monetary policy .)
আর্থিক নীতির উপকরণ বা হাতিয়ার
(Instruments of Monetary Policy)
আর্থিক নীতির দ্বারা অর্থের যােগান নিয়ন্ত্রিত হয়। অর্থের যােগানের মধ্যে শক্তিশালী মুদ্রা যোগানের নীতি ও বাণিজ্যিক ব্যাংক-এর প্রদত্ত ঋণ অন্তর্ভুক্ত থাকে। কাজেই শক্তিশালী মুদ্রা যোগানের নীতি ও ঋণ নিয়ন্ত্রণ নীতির হাতিয়ারগুলোকে আর্থিক নীতির হাতিয়ার বলা হয়।
আর্থিক নীতির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে দেশের অর্থ কর্তৃপক্ষ নিম্নলিখিত হাতিয়ার /উপকরণগুলাের সাহায্য নেয় ।
(১) নােট প্রচলনের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ: অর্থের যােগান নিয়ন্ত্রণ করা আর্থিক নীতির মূল লক্ষ্য। অর্থের যােগানের অন্যতম উপাদান ইস্যুকৃত নােট বা কারেন্সী। দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের পরিমাণ ও লেনদেনের প্রকৃতি লক্ষ্য করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শক্তিশালী মুদ্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
(২) ঋণের যােগান নিয়ন্ত্রণ: বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ প্রক্রিয়া অর্থের যােগানকে যথেষ্ট প্রভাবিত করে। তাই ঋণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে গৃহীত পদক্ষেপগুলাে আর্থিক নীতির উপকরণ হিসাবে বিবেচিত হয় ।
পরিমাণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণের উপকরণঃ
(ক) ব্যাংক হারের পরিবর্তন, (খ) খােলা বাজার নীতি (গ) ন্যূনতম রিজার্ভ আনুপাতের পরিবর্তন।
(ক) ব্যাংক হারের পরিবর্তন: ব্যাংক হার বলতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক আরােপিত একটি সুদের বা বাট্টার হার বুঝানাে হয়, যার ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিতে পারে। ব্যাংক হার বাড়লে বাণিজ্যিক ব্যাংকের সুদের হার বাড়ে। তখন বাণিজ্যিক ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত ঋণের পরিমাণ সংকুচিত হয়ে আসে। অর্থাৎ অর্থের যােগান তখন কমে আসে।
(খ) খােলা বাজার নীতি: যখন খােলা বাজারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণপত্র বিক্রয় করে বাণিজ্যিক ব্যাংকের নিকট থেকে অর্থ তুলে নিতে পারে। তখন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণদান ক্ষমতাও কমে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক খােলাবাজার নীতির মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণের পরিমাণ অর্থাৎ অর্থের যােগানের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।
(গ) ন্যূনতম রিজার্ভ অনুপাতের পরিবর্তন: বাণিজ্যিক ব্যাংকের ন্যূনতম জমা রাখার অনুপাত কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিবর্তন করতে পারে। দেশে ঋণের পরিমাণ কমাতে হলে বা অর্থের যােগান কমাতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ন্যূনতম রিজার্ভ অনুপাত বাড়িয়ে দেয়। আবার অর্থের যােগান বা ঋণের পরিমাণকে প্রসারিত করতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নূন্যতম রিজার্ভ অনুপাত কমিয়ে দেয়।
গুণগত/ নির্বাচিত ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
উল্লেখিত পরিমাণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কতগুলাে নির্বাচিত পদক্ষেপ বা গুণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারে । যেমন, বাণিজ্যিক ব্যাংকের উপর নির্দেশ- আরােপ, নৈতিক চাপ, ঋণ বরাদ্দকরণের সীমা নির্ধারণ এবং ঋণের পরিমাণ ক্ষেত্র বিশেষে স্থানান্তর- মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ তথা অর্থের যােগানকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
প্রফেসর মনতোষ চক্রবর্তী
Email: manotosh.chakravarty@gmail.com
Comentarios