top of page
Search
  • Writer's pictureProf Manotosh Chakravarty

Searching for the Root of Economics





এ আলোচনায় যা যা আছে-

১. ‘দ্য Oeconomicus’-গ্রন্থ পরিচয় 
২. সক্রেটিক ডায়ালগ / সংলাপ কি ? 
৩. সক্রেটিক ডায়ালগ / সংলাপ থেকে অর্থনীতির কি উপকার হয়েছিল? 
৪.‘অর্থনীতির একেবারে গোড়ার গ্রন্থ’ হিসাবে Oeconomicus এর গুরুত্ব 
৫. Oeconomicus এর  পটভূমি বর্ণনা 
৬. ব্যক্তি জেনোফন ও তাঁর চিন্তাধারা
৭.প্লেটো বনাম জেনোফন
৮. জেনোফোনের নিজস্ব অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও  সক্রেটিক সংলাপের  প্রকৃতি
৯. জেনোফোন একদিকে রক্ষণশীল সনাতনবাদী এবং একই সঙ্গে  চলতি এথেনিয়ান সমাজ এবং গার্হস্থ্য অর্থনীতির বিশ্লেষণী পর্যবেক্ষক হিসাবে নিজেকে উপস্থিত করেছেন - সবই কি ছিল তাঁর স্বেচ্ছাকৃত? 
১০. মহিলাদের ইতিবাচক অর্থনৈতিক ভূমিকার স্বীকৃতি 
১১. দাসপ্রথার স্থায়িত্ব প্রেক্ষিতে  প্রতিক্রিয়াশীল মনোভাব প্রদর্শন ১২. জেনোফনের কৃষিক্ষেত্র সংশ্লিষ্ট  আলোচনা
১৩. শ্রম বিভাগ উৎপাদনের জন্য সহায়ক
১৪. সমালোচনা / সীমাবদ্ধতা 
১৫. মন্তব্য 
১৬. শেষের কথা 
১৭.কিছু ছোট প্রশ্নের উত্তর


Xenophon(430-354BC)


১. ‘দ্য Oeconomicus’-গ্রন্থ পরিচয়

গ্ৰীক দার্শনিক জেনোফন(Xenophon) এর দ্য Oeconomicus হলো ‘একটি দার্শনিক সংলাপ’ যাকে সক্রেটিক ডায়ালগ / সংলাপ বলা হয়

এটি গ্রীক সাহিত্যে অনন্য। এর মধ্যে ‘পরিবার’ ও ‘কৃষি’কে নিয়ে নীতিমূলক উপাদানের সঠিক ‘ব্যবস্থাপনা’ সংক্রান্ত আলোচনা পরিচালিত হয়। ধ্রুপদী এথেন্সের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং বৌদ্ধিক ইতিহাসের অন্যতম উৎস হলো এই ‘দ্য Oeconomicus’। এতে আলোচিত বিষয়গুলোর প্রতি ব্যাপক আগ্রহ সত্ত্বেও অনেককাল তা অবহেলিত ছিল , শুধুমাত্র ভাষাগত অনুবাদের অভাবে । কারো কারো অভিমত -ওকোনমিকাস রচনা সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ৩৬২’র পরে হয়েছে । The Battle of Cunaxa এর সূত্র ধরে বলা হয় যে, জেনোফন লিখিত গ্রন্থের প্রথম দিকের অংশটি খ্রিষ্টপূর্ব চারশ’ এক অব্দে রচিত হয়েছিল। উল্লেখ্য যে, সিসেরো(Cicero) ‘ওকোনমিকাস ’কে ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন।

 

*অর্থনীতি বিষয়ক চিন্তাভাবনার ১ম প্রামাণ্য দলিল বা গ্রন্থটি কে লিখেছেন বা সংকলন করেছেন ?

উঃ জেনোফন(Xenophon)


*জেনোফন(Xenophon) লিখিত বা সংকলিত গ্রন্থটির নাম কি ?

উঃ ‘দ্য Oeconomicus’


২. সক্রেটিক ডায়ালগ / সংলাপ কি ?

খ্রীষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে দার্শনিক সক্রেটিস কে ঘিরে খোলা আকাশের নিচে আলোচনা চক্র বসতো, সেই আলোচনা চক্রের সদস্য হিসাবে প্লেটো এবং জেনোফন নিকট ভূমিকা রেখেছিলেন ও তাঁরা তাঁদের কাজের (লেখনীর) মাধ্যমে সক্রেটিস সংশ্লিষ্ট সংলাপগুলো সংরক্ষণ করেন। কাজেই প্লেটো এবং জেনোফন কর্তৃক গদ্যাকারে অথচ কাব্যের ভাবধারায় বা নাটকীয় কথোপকথন এর আকারে সংরক্ষিত সক্রেটিস সংশ্লিষ্ট সংলাপগুলোকে সক্রেটিক ডায়ালগ / সংলাপ বলা হয় । সেই বর্ণনা মূলক অথবা নাটকীয় সংলাপে মুখ্য অংশগ্রহণকারী ছিলেন সক্রেটিস।


Socrates (470- 399 BC)


৩. সক্রেটিক ডায়ালগ / সংলাপ থেকে অর্থনীতির কি উপকার হয়েছিল?

অর্থনীতি বিষয়ক বক্তব্য / বিশ্লেষণ / নীতি প্রতিষ্ঠার ভিত সেই সংলাপের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। জেনোফন (Xenophon) এর ‘দ্য Oeconomicus’ হলো অর্থনীতি বিষয়ক লিখিত চিন্তাভাবনার ১ম প্রামাণ্য দলিল। তাই দ্য Oeconomicus কে অর্থনীতির প্রথম গ্রন্থ হিসাবে দাবি করা যায় পরবর্তীতে আসে প্লেটো’র অন্যতম গ্রন্থ The Republic’, যেখানে আদর্শ নগর রাষ্ট্র বিষয়ে আলোচনা স্থান পায় ও সেখানে অর্থনীতির বিষয় হিসাবে শ্রম বিভাগ, বিশেষীকরণ ও উৎপাদন প্রসঙ্গ আলোচিত হয়।


Plato ( Born: 428/427 or 424/ 423 Died: 348 / 347 BC)



৪. ‘অর্থনীতির একেবারে গোড়ার গ্রন্থ’ হিসাবে Oeconomicus এর গুরুত্ব:

পারিবারিক ব্যবস্থাপনার ওপর একেবারে গোড়াপত্তনের কাজ করে এই Oeconomicus. ক্লাসিকাল সামাজিক এবং বৌদ্ধিক ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য উৎস ছিল এথেন্স আর তাই এই Oeconomicus থেকে এথেন্সের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং বৌদ্ধিক ইতিহাস সম্পর্কে আভাস পাওয়া যায় । অর্থনীতিতে গৃহস্থালীর প্রাথমিক কাজগুলো পরিচালনা সংক্রান্ত মূল ধারণা একেবারে শুরুতে স্থান পায়। আর তা থেকেই সূত্রপাত ঘটে জেনোফন এর Oeconomicus এর ( আর পরবর্তীতে আসে অ্যারিস্টট্ল এর ব্যবহৃত ল্যাটিন শব্দ ‘Oeconomica’ / Oikonomos যা থেকে ‘ইকোনমিক্স’ শব্দের উদ্ভব বলে ধারণা করা হয়)



Aristotle (384 -322 BC)


গৃহস্থালি অর্থনীতিতে গৃহস্থালীর প্রাথমিক কাজগুলোর ওপর জোর দেওয়ার বাইরে, পুরুষ এবং মহিলাদের গুণাবলী এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক বিবেচনা করে গ্রামীণ বনাম নাগরিক / শহুরে জীবন, দাসপ্রথা, নৈতিকতা ও ধর্ম এবং শিক্ষা এসব বিষয়কে নিয়ে সক্রেটিস এর কথোপকথন/ সংলাপ পরিচালিত হয়েছিল । জোসেফ এপস্টেইন বলেন যে, সেনাবাহিনী ও রাষ্ট্র উভয়কেই নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘ওকোনমিকাস ’কে আসলে সাফল্যের চাবিকাঠি হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে।


৫. Oeconomicus এর পটভূমি বর্ণনা:

খোলা বাতায়নে সক্রেটিস এবং ক্রিটোবুউলাস (Critoboulus) এর মধ্যে সংলাপ পরিচালিত হয় , যেখানে ক্রিটোর পুত্র হলেন ক্রিটোবুউলাস । সেখানে সক্রেটিস ‘সম্পদের অর্থ’ নিয়ে আলোচনা করেন এবং সম্পদকে কেবল ‘সম্পত্তি ধরে রাখা’র অর্থে নয় বরং তাকে উপযোগিতা এবং মঙ্গল/ কল্যাণ অর্থে তিনি চিহ্নিত করেন । ‘পরিবার পরিচালনায় / ব্যবস্থাপনায় সাফল্য’ অর্জন করতে হলে সংযম এবং কঠোর পরিশ্রমের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে বলে সক্রেটিস মনে করেন। আর এ বক্তব্যকেই লিপিবদ্ধ করেছেন জেনোফন।

যখন ক্রিটোবুউলস ‘গৃহস্থালী’/ আদর্শ গৃহস্থ জীবন পরিচালনার সাথে জড়িত অনুশীলনগুলো সম্পর্কে সক্রেটিসকে জিজ্ঞাসা করেন, তখন সক্রেটিস বিষয়টি সম্পর্কে তাঁর অজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তবে তিনি বলেন যে, একজন এথেনিয়ান কৃষক-ভদ্রলোক ( নাম হলো ইস্কোমেয়াস/ Ischomachus/ ইসছমছুস ) এর কাছ থেকে তিনি যা শুনেছিলেন তারই সূত্র ধরে কিছু বলতে পারেন বলে জানান । সক্রেটিসের সাথে আলোচনায় ইস্কোমেয়াস বর্ণনা করেছেন তিনি তার স্ত্রীকে হাউসকিপিং-এ (গৃহ- কর্মে) শিক্ষিত করা (নিপুণতা অর্জন), ভৃত্য/ ক্রীতদাসদের শাসন ও পরিচালনা করা, তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি আয়ত্তকরণ ও তার কৌশলিক প্রয়োগ সম্পর্কে জ্ঞান প্রদানের জন্য কি কি পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন।


সক্রেটিস এবং ইস্কোমেয়াসের মধ্যে আলোচনাকে কেন্দ্র করে উক্ত সংলাপের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ চালিত হয়, সেখানে ক্রিটোবুউলাস এর সাথে আর আলোচনার প্রত্যাবর্তন ঘটতে দেখা যায় নি ।

৬. ব্যক্তি জেনোফন ও তাঁর চিন্তাধারা:

খ্রিস্টপূর্ব 430 থেকে 349 অব্দে জেনোফন জীবিত ছিলেন বলে ধারণা করা হয় । তিনি ছিলেন একজন এথেনিয়ান ভদ্রলোক এবং রক্ষণশীল। প্লেটোর মতোই তিনিও ছিলেন সক্রেটিসের বন্ধু এবং কথোপকথন চক্রের সহযোগীদের একজন।


জেনোফন এর জীবন ছিল ঘটনাবহুল। তিনি পারস্যের সিংহাসনের দাবিদার ছোট সাইরাস (Cyrus the Younger) এর পক্ষ নিয়ে যুদ্ধ করার জন্য গ্রীক ভাড়াটে বাহিনী নিয়ে এসেছিলেন । যখন সেই যুদ্ধের দুর্ভাগ্যজনক সমাপ্তি ঘটে, তখন জেনোফন এর ওপর দায়িত্ব পড়লো বর্তমানে ইরাক থেকে গ্রীক বিশ্বে 10,000 সেনাকে ফিরিয়ে নেয়ার। (জেনোফোন এ সম্পর্কে লিখেছেন তাঁর Anabasis তে ) । তিনি এথেন্সের দীর্ঘকালীন শত্রু স্পার্টার দুর্দান্ত বন্ধু ছিলেন বলেও মনে করা হয়। তিনি তাঁর নিজের শহর এথেন্সের বিরুদ্ধে স্পার্টার হয়ে লড়াই করেছিলেন। যুক্তিযুক্তভাবেই ফলস্বরূপ, তিনি কয়েক দশক নির্বাসনে কাটিয়েছিলেন, যদিও তিনি সম্ভবত তাঁর জীবনের শেষদিকে অ্যাথেন্সের সাথে শান্তি স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিলেন ।


৭. প্লেটো বনাম জেনোফন:

প্লেটো এবং আরও অনেকের মতো, জেনোফোন সক্রেটিক সংলাপ (সক্রেটিসকে স্পিকার হিসাবে চিহ্নিত করে ডায়লগ) রচনা করেছিলেন। কিছু ক্ষেত্রে, জেনোফোনের রচনা, প্লেটোর সক্রেটিক সংক্রান্ত রচনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তবে জেনোফোনের সক্রেটিক রচনা (যা প্লেটোর মতো নয়) ব্যবহারিক বিষয়ে বেশি আকর্ষণীয় বলে প্রতিভাত হয় । বিপরীতে, প্লেটোর সক্রেটিক রচনা প্রায়শঃই একটি পরিশীলিত রূপক, যুক্তিনির্ভর এবং নীতিশাস্ত্রের মুখপত্র হিসাবে কাজ করে।

৮. জেনোফোনের নিজস্ব অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সক্রেটিক সংলাপের প্রকৃতি:

প্রাচীন অর্থনীতিকে আধুনিক উপলব্ধির আলোকে বিচার করতে গিয়ে অনেক মৌলিক প্রশ্ন এখানে উত্থাপিত হতে পারে । ওকোনমিকাস হলো দার্শনিক সংলাপ এবং কৃষি বিষয়ক গ্রন্থের সংমিশ্রণ । তবে কেন্দ্রীয় থিম (মূল ভাবধারা) হিসাবে গৃহস্থালী এবং এস্টেট (সম্পত্তি) পরিচালনার বিষয়টির অবস্থান সেখানে স্পষ্ট । জেনোফন গার্হস্থ্য (আদর্শ গৃহস্থ/ পারিবারিক) অর্থনীতি বিশ্লেষণ করতে চান — এর প্রকৃতি কী এবং কীভাবে এটিকে ঠিক ঠাক করে তোলা যায়, এর ওপর আলোকপাত করতে চান। কেবল একটি বিবাহ ও পরিবার গঠন ও "কীভাবে সেই পরিবার চালাতে হবে" এ বিষয়টি তাঁর একমাত্র বিবেচ্য ছিল না । একটি বাড়ি ও একটি এস্টেট - ঘিরে তাঁর মন্তব্য এবং সংলাপের তীক্ষ্ণ দিক নির্দেশনা লক্ষ্য করার মতো বিষয় । তবে জটিল সাহিত্যের স্টাইল এবং কথোপকথনের বর্ণনামূলক নাটকীয় চরিত্র উপস্থাপন , তাদের সম্পর্কে মন্তব্যগুলো আমাদের ভাবনা চিন্তায় দোলা দেয় । জেনোফনের যুক্তি সেখানে যেভাবে উপস্থাপিত হয়েছে , তার চেয়েও বেশি প্রামাণিক হয়েছে বাস্তব পরিস্থিতির চিত্রণ ।


‘ওকোনমিকাস’ ভাষ্যটির দুর্দান্ত সম্পদের মাঝে রয়েছে ইস্কোমেয়াসের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা। জেনোফনের রসবোধ সম্পর্কেও আমরা এখান থেকে অবগত হতে পারি। ইস্কোমেয়াসের বিবাহের চিত্রিত/ বর্ণিত অংশটি যদি কেউ নিবিড় ভাবে দেখেন, তবে সেখানে ‘স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে যে কথোপকথন’ তার মধ্যে হাস্যরসের স্থান আছে , আর তা বাস্তবও বটে। সংলাপে হাস্যরসের স্থান দেওয়া হলেও জেনোফনের সামগ্রিক উদ্দেশ্যটি যে ছিল গুরুত্বপূর্ণ , তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। আদর্শ বিবাহ যে অতীত আদর্শায়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা সামাজিক সামগ্রিক নকশারই অংশ, তা সেখান থেকে উপলব্ধি করা যায় ।


একসময় জেনোফোন অতীত ও বর্তমানের মধ্যবর্তী সময়ের ভাল দিনগুলো থেকে কম গৌরবময় দিকে যখন চলে আসেন , তখন পেলোপনেসিয়ান যুদ্ধের(Peloponnesian War) প্রভাবে এথেনিয়ান সমাজ অপরিবর্তনীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়েছিল । জেনোফোন তাঁর ওকোনমিকাস তে পর্যবেক্ষণ করেছেন - বিবাহের ঐতিহ্যগত বিবর্ণতা এবং পরিবারের স্বনির্ভরতার সংঘাতময়তা থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর পতনের সূচনা হয়েছিল ।

৯. জেনোফোন একদিকে রক্ষণশীল সনাতনবাদী এবং একই সঙ্গে চলতি এথেনিয়ান সমাজ এবং গার্হস্থ্য অর্থনীতির বিশ্লেষণী পর্যবেক্ষক হিসাবে নিজেকে উপস্থিত করেছেন - সবই কি ছিল তাঁর স্বেচ্ছাকৃত?

ইতিহাসের বহিরাগত প্রভাব এবং বহু স্তরের পর্যালোচনায় জেনোফনের এ কাজটিতে আপাত দ্বন্দ্ব যা দেখা গিয়েছিলো, তা হয়তো জেনোফনের ইচ্ছাকৃত ছিল । একটি হতে পারে যে, যুদ্ধের প্রভাবগুলো অনুমানের চেয়ে কম তীব্র ছিল এবং জেনোফন ঐতিহ্যগত মূল্যবোধকে আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজনে সাড়া দিয়েছেন এবং স্থায়ী উত্তম অভ্যাসগুলোর বিষয়ে মন্তব্য করছেন , যা তাঁর মতে সর্বদা উপকারী ফলাফল প্রদান করেছে। আরেকটি হতে পারে যে, জেনোফন জেনেশুনে এখানে অনেকগুলো ‘গেম’ খেলছেন , যার মধ্যে সবচেয়ে জটিল হল তাঁর প্রকৃত উদ্বেগকে তিনি উপমা হিসাবে উল্লেখ করেছেন। আর ঘরোয়া অর্থনীতি কেবল একটি বড় চিত্রের অংশবিশেষের প্রতিফলন। তিনি প্রকৃতপক্ষে অতীতাশ্রয়ীতাকে সমাজের আদর্শ হিসাবে দেখিয়েছেন।

১০. মহিলাদের ইতিবাচক অর্থনৈতিক ভূমিকার স্বীকৃতি:

জেনোফন মহিলাদেরকে প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য হিসাবে অগ্রণী / "উন্নত" হিসাবে বিবেচনা করছেন। কারণ মহিলাদের বৌদ্ধিক সম্ভাবনা (intellectual potential) এবং তাদের দায়িত্ব গ্রহণের সামর্থ / দক্ষতা (capacity for taking responsibility) পরিবারের সমৃদ্ধি বজায় রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে।


১১. দাসপ্রথার স্থায়িত্ব অনুমান করে প্রতিক্রিয়াশীল মনোভাব প্রদর্শন:

গ্রীক-বিশ্বে দাসদেরকে সম্পত্তি হিসাবে বিবেচনা করা হত, পরিবারের অংশ(সদস্য) হিসাবে নয়। তবে জেনোফন একটি মানবিক উদার দৃষ্টিভঙ্গি হিসাবে ইস্কোমেয়াস এবং তার দাসদের মধ্যে সম্পর্ক চিত্রিত করেছিলেন। কিন্তু ইস্কোমেয়াস কি দাসদের সত্যিকারের স্বাধীনতা অর্জন করার জন্য ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন, নাকি কেবল নিজ স্বার্থে / নিজ লক্ষ্যে তাঁর সেই উদ্যোগকে তিনি পরিচালনা করেছিলেন ? তিনি দাসদের সম্পর্কে যে বক্তব্য রাখেন, তার মধ্যে অবশ্য মনুষ্যত্বের/ মানবতাবোধের প্রতিফলন ঘটে না। যেমন তিনি বলেছিলেন- "দাস পরিবারগুলো বিলুপ্ত হবে না," এবং তিনি অনুমান করেন যে, সেজন্য ধার্মিক এবং ভাল আচরণ করা দাসরা ইস্কোমেয়াসের ন্যায় পরিবারকে ছেড়ে যেতে চাইবে না। কাজেই মালিক এবং দাসের মধ্যে সম্পর্ক অনেকটা অলঙ্ঘনীয় বলে তিনি দেখিয়েছেন।

১২. জেনোফনের কৃষিক্ষেত্র সংশ্লিষ্ট আলোচনা:

খামারি ইস্কোমেয়াস ও তার দাস-শ্রমিকদের মধ্যে প্রদর্শিত সম্পর্কগুলো যদি সত্যিকারের নাও হয়, জীবনের অভিজ্ঞতার সাথে তা সর্বাঙ্গীনভাবে না মিললেও জেনোফনের কৃষিক্ষেত্রের আলোচনা অনেকটা বাস্তবসম্মত বলে ধারণা করা হয়। তবে এটিও ঠিক যে , কেবল ওকোনমিকাসের সূত্র ধরে কেউ সফলভাবে খামার কাজ পরিচালনা করতে পারবেন না

জেনোফোন কৃষিক্ষেত্রে অতীতের অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আধুনিক পদ্ধতির সুপারিশ করতে চান। জেনোফন যুক্তি দেখিয়েছেন যে, দীর্ঘদিন ধরে জমি থেকে দূরে থাকা এথেনিয়ান জনগোষ্ঠীর জীবিকা নির্বাহের জন্য রূপান্তরিত কৃষিক্ষেত্রের পুনঃ শিক্ষার প্রয়োজন আছে। যুদ্ধের পরে দাস-শ্রমের ব্যবহার, স্বল্প পতিত জমি নিবিড় চাষের পদ্ধতি প্রয়োগ প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে। জেনোফোন এর বর্ণনা থেকে যুদ্ধের পরে কৃষিতে অ্যাথেনীয় উন্নতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

জেনোফোন কৃষির চিরাচরিত প্রকৃতির উপর জোর দিয়েছিলেন ইস্কোমেয়াস একসময় ঘোষণা করেছেন যে, নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করে নয়, বরং কঠোর পরিশ্রমলব্ধ জ্ঞানের প্রয়োগ সাফল্য নিয়ে আসে গ্রিসে ঐতিহ্যবাহী কৃষিতে পশুপালন সর্বদা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে জেনোফোন এটিকে ইস্কোমেয়াসের এস্টেটের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে দেখান। আর এটিও জানা যায় যে, গার্হস্থ্য অর্থনীতির জন্য পশমের তখন স্পষ্ট গুরুত্ব ছিল তবে শ্রম- সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইস্কোমিয়াসের আগ্রহের পরেও কিন্তু মালিক এবং রাখালদের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়ে কিছুই সেখানে বলা হয় না।

১৩.শ্রম বিভাগ উৎপাদনের জন্য সহায়ক:

শ্রম বিভাগ উৎপাদনের জন্য সুফল ছিল, এটি উদ্ধৃত করে একজন দার্শনিক, ইতিহাসবিদ হয়েও Xenophon অর্থনীতিবিদ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন । তিনি দেখান যে, শ্রম বিভাগ দ্বারা শুধু পরিমাণ নয়, পণ্যের মানও উন্নত হয় । এ প্রসঙ্গে গ্রেট কিংয়ের রান্নাঘরের কথা উল্লেখ করা হয়, যেখানে শ্রম বিভাগ দ্বারা প্রাপ্ত রান্নার মান বৃদ্ধি সম্পর্কে জানা যায়, এছাড়াও কোনও গ্রামে একক মুচির জুতা সেলাই এর তুলনায় একটি নগরীর কর্মশালায় বিশেষজ্ঞ জুতা প্রস্তুতকারকের পণ্যটি উৎকৃষ্ট হয়।

১৪. সমালোচনা / সীমাবদ্ধতা :

"ঘরোয়া/গার্হস্থ্য অর্থনীতি" জেনোফোন এর গ্রন্থে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসাবে স্থান পায় । কিন্তু তিনি কৃষিক্ষেত্র ছাড়া গৃহস্থালীর অন্যান্য উৎপাদনের সমস্ত দিক অবহেলা করেছিলেন। ফলে দাস ও মুক্ত উভয় ধরণের মহিলাদের অর্থনৈতিক অবদানকে তিনি অবমূল্যায়ন করেছেন বলে সমালোচনা করা হয়। বস্ত্র উৎপাদন প্রসঙ্গে কিছু তথ্য জেনোফোন এর গ্রন্থে স্থান পেলেও এটি ছিল অর্থনীতির অবহেলিত দিক। দাস প্রথার স্থায়িত্ব এর প্রতি আস্থা রেখে জেনোফোন “প্রতিক্রিয়াশীল” দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দেন , যা কাম্য ছিল না।


পরিবারে যৌতুক-প্রথার গুরুত্বের কথাও তিনি স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি যুক্তি দিয়েছেন যে যৌতুক-প্রথার প্রাচীনত্বটি অর্থনৈতিকভাবে নির্দোষ নৈতিক, রাজনৈতিক বা দার্শনিক ধারণা থেকে পৃথক ছিল না। তবে যৌতুক-প্রথার কুপ্রভাব বিষয়ে তিনি মতামত প্রদানে বিরত ছিলেন।


১৫. মন্তব্য :

জেনোফোন এর গ্রন্থ থেকে বলা যায় যে, লাভ ও লোকসান, সম্পদ ও দারিদ্র্য এবং দারিদ্রের কারণ সম্পর্কে প্রাচীন বিশ্ব অবশ্যই পুরোপুরি সচেতন ছিল, এটি অস্বীকার করা যায় না। ইই কোহেন, ‘অ্যাথেনিয়ান অর্থনীতি এবং সমাজ: একটি ব্যাংকিং পরিপ্রেক্ষিত’ [1992]) তে উল্লেখ করেছেন যে, আধুনিকতাবাদীরা দৃঢ়তার সাথে প্রমাণ করতে পারেননি- প্রাচীন অর্থনীতি মূলত আধুনিক অর্থনীতিরই শৈশবকাল ছিল। তাদের কেবল স্কেল এবং তীব্রতার মধ্যেই পার্থক্য ছিল না, গতিশীলতার দিক থেকেও তারা পৃথক ছিল।

১৬. শেষের কথা :

জেনোফোন মনে করতেন, কিভাবে এক গ্রিক সজ্জন ব্যক্তি পরিবার পরিচালনা করবে- সেই পরিবারের ব্যবস্থাপনায় স্ত্রীর ভূমিকা কিরূপ হবে- কিভাবে স্ত্রী কর্তৃক পারিবারিক খামার পরিচালনা করা উচিত- এসব নিয়ে যে হাউসহোল্ড ইকোনমি, তার ওপর জ্ঞান -অভিজ্ঞতা থাকা আবশ্যক । একটি শিল্প বা যুদ্ধক্ষেত্র ও কৃষিক্ষেত্র কিভাবে পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন, তা জানা যেমন জরুরি, তেমনি হাউসহোল্ড ইকোনমির ওপর জ্ঞানও মানুষের জন্য অপরিহার্য।


জেনোফোন এর আলোচনাকে তাই ‘সাধারণ’ বলে উড়িয়ে দেয়া যায় না, বরং তা অনেক পরিশীলিত চিন্তার যোগান দেয়। জেনোফনের মূল ধারণা ও উদ্বেগগুলো - ভাল বিবাহ, সুশৃঙ্খল পরিবার, যথাযথভাবে সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা - কে দৃষ্টান্ত হিসাবে গ্রহণ করে তাকে প্রসারিত পরিসরে যেমন নগর, রাষ্ট্র, সাম্রাজ্য বা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রয়োগ করা সম্ভব। ব্যক্তি/ পরিবার এর ক্ষেত্রে অর্থনীতির বীজ প্রোথিত হয়ে সমাজ, রাষ্ট্র, বিশ্বব্যাপী তা পল্লবিত হয়, এই হলো জেনোফোন এর মূল ভাবনা /দর্শন এবং ওকোনমিকাস এর মূল বিষয়বস্তু ।

১৭. কিছু ছোট প্রশ্নের উত্তর:


১. কার হাত ধরে প্রথম অর্থনীতি বিষয়ক লিপিবদ্ধ আলোচনার সূত্রপাত ঘটে ? এ প্রসঙ্গে সঠিক নামটি নির্বাচন করো -(ক) এডাম স্মিথ (খ) অ্যারিস্টট্ল (গ ) প্লেটো (ঘ ) জেনোফন।

উঃ (ঘ ) জেনোফন(Xenophon)


২. অর্থনীতি বিষয়ক লিখিত চিন্তাভাবনার ১ম প্রামাণ্য দলিল বা গ্রন্থ কোনটি?

উঃ জেনোফন (Xenophon) এর ‘দ্য Oeconomicus’ হলো অর্থনীতি বিষয়ক লিখিত চিন্তাভাবনার ১ম প্রামাণ্য দলিল।


৩. Oeconomicus কোন বিষয়কে ঘিরে পরিচালিত হয় ?

উঃ ‘প্রধানত পরিবারের ব্যবস্থাপনা এবং কৃষি সম্পর্কে সক্রেটিক সংলাপ’(a Socratic dialogue principally about household management and agriculture) বিষয়কে ঘিরে গ্ৰীক দার্শনিক জেনোফন (Xenophon) এর Oeconomicus (গ্ৰীক: Οἰκονομικός) পরিচালিত হয়।


৪. ‘ইকোনমিক্স’ শব্দের উদ্ভব কিভাবে? Oeconomicus (গ্ৰীক: Οἰκονομικός) এর সূত্র ধরে আসে অ্যারিস্টট্ল এর ব্যবহৃত ল্যাটিন শব্দ ‘Oeconomica’ বা Oikonomos থেকে ‘ইকোনমিক্স’ শব্দের উদ্ভব বলে ধারণা করা হয়।





ধন্যবাদ

মনতোষ চক্রবর্তী

সূত্র (রেফারেন্স) ও কৃতজ্ঞতাঃ

1. A Review by Alison Burford of Cambridge, England of Sarah B . Pomeroy’s A Social and Historical Commentary, Oxford , 1994

2. Encyclopedia Bitannica

3. Oeconomicus - by Xenophon , edited by Sarah B . Pomeroy

4. Wikipedia





206 views0 comments

Recent Posts

See All

Comments


bottom of page